গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর। ওই সম্মেলনে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর দীর্ঘ সময় চলে গেলেও করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ ১৯ মাস ১৪ দিন পর আজ বুধবার বিকেলে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বাদ পড়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাঙ্গাঙ্গীর আলম। তাঁকে কোনো পদে, এমনকি সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ বিকেলে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির(২০২২-২০২৫) অনুমোদন দেন। এ কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদের ২৮ সদস্যের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন। যেখানে অনেক ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন, সেখানে আমি থাকতে চাই না। আজমত উল্লা খান তাঁর নিজের ইচ্ছেমতো এবং স্বজনদের দিয়ে এই কমিটি করেছেন। এই কমিটিতে হত্যা মামলার আসামিরা পদ– পদবি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদককে ভুল বুঝিয়ে কমিটিতে স্বাক্ষর করে নিয়ে আসা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুমোদনে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খানকে সভাপতি ও আতা উল্যাহ মন্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে সামসুন নাহার ভূঁইয়া, মতিউর রহমান, আবদুল হাদী, রেজাউল করিম ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, ওসমান আলী, আসাদুর রহমান, সফর উদ্দিন খান, শেখ মো. আসাদুল্লাহ, হেদায়েতুল ইসলাম ও মো. আবদুল আলীম মোল্লাকে।
কমিটির অন্যান্য পদের নেতারা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন সরকার, কাজী ইলিয়াস আহমেদ ও এ বি এম নাসির উদ্দিন।
কমিটিতে স্থান পেয়েছেন আইনবিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন মোল্লা, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ফজলুর রহমান, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মওলানা আক্তার হোসেন গাজীপুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল হালিম সরকার, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাইজ উদ্দিন মোল্লা, বিজ্ঞান ও প্রযুত্তিবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ উল্লাহ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হোসনে আরা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খালেকুজ্জামান, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হীরা সরকার, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. বাছির উদ্দিন এবং শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মো. সোলায়মান মিয়া।
এ কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ও মেহের আফরোজ চুমকি এবং কাজী আলিম উদ্দিন, অধ্যাপক এম এ বারী, ওয়াজ উদ্দিন মিয়া, মো. আবদুর রউফসহ ৩৬ জনকে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর। সে সময় সভাপতি করা হয় আজমত উল্লা খানকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় আতা উল্যাহ মন্ডলকে। জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন আতা উল্যাহ মন্ডল। আজ ঘোষিত নতুন কমিটিতে আজমত উল্লা খানকে সভাপতি ও আতা উল্যাহ মন্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে তাঁদের হাতেই নেতৃত্ব দিয়েছে দল। ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে সম্মেলন শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে জাহাঙ্গীর আলমকে দলে ফিরিয়ে আনেন ওবায়দুল কাদের। বিষয়টি পত্রের মাধ্যমেও জানানো হয়। দীর্ঘদিন পর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও এবার সদস্য হিসেবেও জাহাঙ্গীর আলমকে রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আতা উল্যাহ মন্ডল প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করা হয়েছিল আজীবনের জন্য, আবার তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফিরে এসে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে ঝামেলা করেছেন। তাঁকে কমিটিতে নেওয়ার কোনো কারণ নেই।
এই নেতা আরও বলেন, তারপরও যদি কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করে যে তাঁকে নিতে হবে বা এমন কোনো নির্দেশনা দেয়, তখন হয়তো নেওয়া হতে পারে।
আজমত উল্লা খান প্রথম আলোকে বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কৃত। তাঁকে আর দলে ফিরিয়ে আনা হয়নি। তাই তাঁকে কোনো পদে বা সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত এক পত্রে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নবনির্বাচিত এই কমিটির সব সদস্য নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা, আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন এবং সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ আরও সুদৃঢ়, সুসংগঠিত ও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হবে।