চট্টগ্রামের কর্ণফুলী

টাকার দ্বন্দ্বে অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে থাকা লাশ দাফন হলো ৩৯ ঘণ্টা পর

অবসরের টাকার জন্য ভাই-বোনদের দ্বন্দ্বে অ্যাম্বুলেন্সে পড়ে ছিল বাবার লাশ। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। রোববার বিকেল চারটার সময়
ছবি: প্রথম আলো

পেনশনের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সন্তানদের দ্বন্দ্বে বাড়ির উঠানে পড়ে থাকা মনির আহমেদের লাশ জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলমের হস্তক্ষেপে লাশটি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি মারা যান গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে।

মোহাম্মদ দিদারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে ইউপি সদস্যকে পাঠাই। দুই মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের জমা টাকা পরে সুষ্ঠু বণ্টনের আশ্বাস দিয়ে লাশ দাফনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার সাড়ে ১৭ হাজার টাকাও আমি পরিশোধ করেছি।’

কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মনির আহমেদ পদ্মা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি গত বছর অবসরে যান। তাঁর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে আছে। ছোট ছেলে বিদেশে থাকেন।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেল মনির আহমেদ মারা গেলে রাতে লাশ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়। এরপর মনির আহমেদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা ব্যাংকের টাকা উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান। ফলে আটকে থাকে জানাজা ও দাফনের কাজ। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে তাঁকে দাফন করা হয়। এর আগে রোববার রাতেই লাশ রেখে চলে যান মনির আহমেদের তিন মেয়ে।

আজ বেলা ১১টার দিকে মনির আহমেদের স্ত্রী দিলুয়ারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকরি থেকে অবসরের পর আমার স্বামী ক্যানসারে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর আগে তিনি হাসপাতালে ছিলেন। চিকিৎসা চলাকালে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে ৩০ লাখ টাকা তুলে নেয় আমার মেয়ে বেবি আক্তার। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর লাশ গ্রামে আনলে আমার ছেলে যখন বেবির কাছ থেকে টাকার কথা জানতে চায়, তখন সে স্বীকারই করেনি। পরে রোববার রাতেই মেয়েরা লাশ রেখে পালিয়ে যায়। চিকিৎসাসেবার নাম করে আমার স্বামীর টাকাও নিয়ে নিল, আমাকে নিঃস্বও করে গেল।’

একই অভিযোগ করে ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ব্যাংক থেকে টাকাও নিয়ে গেল, স্বীকারও করতে চাইল না। এ কারণেই লোকজন আমাদের ভুল বুঝল।’

মনির আহমেদের ব্যাংক হিসাব থেকে বিভিন্ন সময়ে ৩০ লাখ টাকার বেশি উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এবি ব্যাংকের চাতরী চৌমুহনী শাখার ব্যবস্থাপক ফারহান জামান। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে নিয়ম মেনে লেনদেন করেছেন প্রয়াত মনির আহমেদ।