শেরপুরে খালে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার, ডুবছে খেত

খালের দুই পাশে তিনটি ইউনিয়নে অন্তত দেড় হাজার একর জমির আমনখেত ডুবে গেছে। কৃষকেরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

মাছ ধরার জন্য খালে বেড়া দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি শেরপুর উপজেলার মান্দাইলগ্রামে

খালে আড়াআড়ি পুঁতে রাখা হয়েছে বাঁশের খুঁটি। এর সঙ্গে রয়েছে বাঁশের চাটাই ও মোটা প্লাস্টিক। আর মাছ ধরার জন্য রয়েছে সুতি জাল। এ ভাবেই বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নে খালে মাছ ধরা হচ্ছে।

পানিপ্রবাহে বাধা পাওয়ায় খালের দুই পাশে তিনটি ইউনিয়নে অন্তত দেড় হাজার একর জমির আমনখেত ডুবে গেছে। খাল থেকে মাছ ধরার বেড়া না সরালে ধানখেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ বিষয়ে তাঁরা গত বুধবার শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বিশালপুর ইউনিয়ন মান্দাইল গ্রামের আয়নাল হক ও তাঁর সহযোগীরা ওই খালে বেড়া দিয়ে মাছ ধরছেন। এই ইউনিয়নে মান্দাইলসহ অন্তত চার স্থানে বেড়া দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এলাকায় আয়নাল হক প্রভাবশালী এবং স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে খালটি প্রবাহিত হয়েছে। করতোয়া নদী থেকে খালটি চলে গেছে উপজেলার কুসুম্বি ও বিশালপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে, যুক্ত হয়েছে চলনবিলে নাটোরের সিংড়া ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য অন্তত ২০ কিলোমিটার।

গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, মান্দাইল গ্রামে খালে বেড়া দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। খালের ভেতর বাঁশের খুঁটি পুঁতে সঙ্গে বাঁশের চাটাই ও প্লাস্টিক জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এলাকার ২০ জন কৃষক বলেন, খালে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তাঁরা খালের ভেতর থেকে বাঁশের খুঁটি ও সুতি জাল সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিদের বাধার কারণে তা পারেননি।

উপজেলার বাগড়া গ্রামের বিশা শেখ বলেন, খালের পানি স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হতে না পারায় শাহবন্দেগী, কুসুম্বি ও বিশালপুর ইউনিয়নের অন্তত ১ হাজার ৫০০ একর জমি একসপ্তাহ ধরে পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি সরে যাওয়ার পর এসব চারা পচে নষ্ট হয়ে যাবে। আবার নতুন করে চারা রোপন করতে হবে। আর খালের মুখ থেকে দ্রুত ওই সব বাঁশের খাঁচাসহ সুতি জাল
দ্রুত অপসারণ করতে না পারলে চলতি মৌসুমের আমন ধানের চারা রোপনের মৌসুমও শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে এলাকার অন্তত দুই হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

খালে বেড়া দিয়ে মাছ ধরার কথা স্বীকার করে আয়নাল হক বলেন, তিনি একা এভাবে মাছ ধরছেন না। আরও অনেকেই খালের মুখে পানিপ্রবাহের গতিরোধ করে সুতি জাল দিয়ে মাছ ধরছেন।

কৃষকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শেরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই সমস্যার সমাধানের দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

শেরপুরের ইউএনও সানজিদা সুলতানা বলেন, ওই এলাকার কৃষকদের সমস্যার কথা জেনেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।