বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ ঘরে শ্বাসকষ্টে ছটফট করছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাসিমা আক্তার। খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধারে ছুটে যান শিক্ষার্থীরা। এরপর ওই নারীকে নিয়ে ছোটেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাসিমাকে বাঁচানো যায়নি। গতকাল শনিবার রাত ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
নাসিমা আক্তারের (৩১) বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের গৃদোকালিন্দীয়া গ্রামে। আজ রোববার সকালে নাসিমার লাশ ঢাকা থেকে গ্রামে এনে দাফনের ব্যবস্থা করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁর স্বামী জাফর একসময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। বর্তমানে অসুস্থতার কারণে ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। এই দম্পতির ১৪ বছর ও ৭ বছর বয়সী দুটি ছেলে রয়েছে।
চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম বলেন, শিক্ষার্থীরা খবর পান, ফরিদগঞ্জের গৃদোকালিন্দীয়া গ্রামের অসহায় সিএনজিচালক জাফরের সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জলাবদ্ধ ঘরে শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে শনিবার দুপুরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে পরে বিকেলে সেখান থেকে এনে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক নুসরাত জাহান অন্তঃসত্ত্বা নাসিমার অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক ২ হাজার টাকা তুলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই নারীকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। রাত ১০টায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্ত্রোপচারের কক্ষে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়।
নাসিমা আক্তারের স্বামী জাফর বলেন, তাঁর স্ত্রী একজন হৃদ্রোগী। তাঁর হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র থাকায় শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। অনেক আগে একবার ঢাকায় চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন। তখন চিকিৎসক সন্তান নিতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু সাত মাস আগে নাসিমা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এতে তাঁর শ্বাস কষ্ট বেড়ে যায়।
জাফর আরও বলেন, ‘আমি নিজে একজন পঙ্গু মানুষ। লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করি। টানা বৃষ্টির কারণে বাড়িঘরে হাঁটুপানি উঠেছে। এর মধ্যে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন কী করব, ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। এর মধ্যে খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা এসে আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁরা চিকিৎসার খরচও বহন করেন।’
চাঁদপুর ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক নুসরাত জাহান বলেন, সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাসিমার হার্টে ছিদ্র থাকায় শ্বাস নিতে পারছিলেন না। জটিল অবস্থা দেখে দ্রুত ঢাকায় পাঠানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এই অবস্থায় সাত মাসের বাচ্চার জীবনটাও হারাতে হলো। শিক্ষার্থীরা কজন আপ্রাণ চেষ্টা করেও ওই নারীর শেষ রক্ষা হলো না।