পাকুন্দিয়ায় ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে পুনরায় নির্বাচনের দাবি

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলামের সংবাদ সম্মেলন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা সদরের ঈদগাহ মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে রফিকুল ইসলাম এ দাবি জানান
ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভোট পুনর্গণনা ও নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম (রেনু)। তিনি পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরের ঈদগাহ মাঠে সংবাদ সম্মেলন করে রফিকুল ইসলাম এ দাবি জানান।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে পাকুন্দিয়া উপজেলায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত বেসরকারি ফলাফলে বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত এমদাদুল হক (জুটন) আনারস প্রতীকে ২৮ হাজার ৭৩৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। মোটরসাইকেল প্রতীকে রফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ২৭ হাজার ৭৯১ ভোট।

সংবাদ সম্মেলনে রফিকুল অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনে আমাকে কারচুপি করে হারানো হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোটের মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধান হয়েছে। এখানে সব চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা হলো ৭০ হাজার ৩৩৪। আর পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৭৫ হাজার ৪১৬। এ ছাড়া এখানে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ৭০ হাজার ২০৬। চেয়ারম্যান ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের প্রদত্ত ভোটের সংখ্যায় বিস্তর ফারাক রয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, এখানে ফলাফলে কারচুপি করে আমাকে হারানো হয়েছে।’

প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রফিকুল বলেন, ‘অধিকাংশ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার যোগসাজশে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা আনারসের ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। কারণ, আনারসের প্রার্থী এমদাদুল হকের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন সমর্থন দিয়েছেন এবং নির্বাচন ও ফলাফলে সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন প্রভাব বিস্তার করেছেন। আমি বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বারবার তাগাদা দিলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাঁরা সবাই মিলে আমাকে কারচুপি করে হারিয়েছেন। আমাকে জোর করে ৯৪৭ ভোটে পরাজিত দেখানো হয়েছে। এটি প্রহসনের নির্বাচন, কারচুপির নির্বাচন ও ব্যালট ছিনতাইয়ের নির্বাচন। তাই এ নির্বাচন আমি প্রত্যাখ্যান করলাম। এই ফলাফল আমি মানি না।’

রফিকুল এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম, ব্যালট ছিনতাই ও জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ফল বাতিল করে আবার নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আজকে সব ভোটকেন্দ্রের কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচনী ফলাফলের শিট চাইব। আমি জানি, এ নিয়ে তাঁরা গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করবেন।’ যদি ফলাফলের শিট দুই দিনের মধ্যে না দেওয়া হয়, তাহলে কর্মী–সমর্থক নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার আলটিমেটাম দেন তিনি। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম আকন্দ, স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল হক, লাল মিয়া, দুলাল মিয়াসহ তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তাড়াহুড়া করে প্রথমে একটি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছিল। যে কারণে ওই ফলাফল শিটে ভোটারদের মোট যোগফলে কিছুটা ত্রুটি হয়েছিল। তাই পরবর্তী সময়ে আবারও যোগফল মেলানো হয়েছে এবং আবার ফলাফল শিট স্বাক্ষর করে সব জায়গায় পাঠানো হয়েছে। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, পরের শিটে জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও পরাজিত প্রার্থী অভিযোগকারী রফিকুলের ভোট আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ঠিক থাকলেও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৭০ হাজার ৩৯০ ভোট, যেটা আগের শিটে ছিল ৭০ হাজার ৩৩৪ ভোট। আর পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ছিল আগের শিটে ৭৫ হাজার ৪১৬, যেটার পার্থক্য নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল। কিন্তু এটা পরবর্তী সময়ে আবার যোগ করে মেলানো হয়েছে ৭০ হাজার ৬৩ ভোট।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণায় কোনোরকম কারসাজি হয়নি। ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা যে ফলাফল দিয়েছেন, সেটাই ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রথমে তাড়াহুড়া করে যোগফলে ভুল হয়েছিল। পরে সেটা সংশোধন করা হয়েছে। রফিকুল ইসলাম যদি ফলাফলে সন্তুষ্ট না হন, তবে তিনি আইনের পথ বেছে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে মামলা করারও সুযোগ রয়েছে তাঁর।

এমদাদুল হক বলেন, পাকুন্দিয়ার নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। এতে কোনো কারচুপির ঘটনা ঘটেনি। কেউ যদি এ বিষয়ে অভিযোগ তোলেন, তাহলে সেটা ভিত্তিহীন। তিনি আরও বলেন, এখন নির্বাচনের একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে, যদি কেউ জয়ী হন, তাহলে বলেন, নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। আর যদি হারেন, তাহলে বলেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়ম হয়েছে।