নিহত কিশোর আবদুল্লাহ
নিহত কিশোর আবদুল্লাহ

‘ফ্রি ফায়ার’ গেম নিয়ে ঝগড়া, বন্ধুর হাতে খুন কিশোর আবদুল্লাহ

দুই কিশোর বন্ধু খেলছিল সহিংসতা ভরা ‘ফ্রি ফায়ার’ নামের একটি মুঠোফোন গেম। খেলার একপর্যায়ের ঝগড়া বেঁধে যায় দুজনের মধ্যে। তর্কাতর্কি ও হাতাহাতির একপর্যায়ে এক কিশোর আরেক কিশোরের কণ্ঠনালিতে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। চট্টগ্রাম নগরের বন্দরটিলায় কিশোর আবদুল্লাহর হত্যায় জড়িত ১৫ বছর বয়সী কিশোর ও তার মাকে গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য জানতে পারে পুলিশ। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের বন্দরটিলা থেকে আবদুল্লাহর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা (পশ্চিম/বন্দর) বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, হত্যার পর পালানোর উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহর বাবার কাছে মুক্তিপণ চেয়েছিল ওই কিশোর ও তার মা। আবদুল্লাহর বাবা যাতে ছেলেকে খুঁজতে তাদের বাড়িতে না আসেন, সে জন্যই এমন পন্থা অবলম্বন করে তারা। হত্যার পর ওই কিশোর ও তার মা মিলে আবদুল্লাহর লাশ বস্তাবন্দী করে ফেলে এসেছিল। তাদের বিরুদ্ধে ইপিজেড থানায় মামলা করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ঝালকাঠির গ্রামের বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে বাবার কাছে বেড়াতে এসেছিল কিশোর মো. আবদুল্লাহ (১৩)। পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরের বন্দরটিলা এলাকার হাবীবীয়া তাজবিদুল কুরআন একাডেমিতে পড়ালেখা করত সে। পরে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তাঁর বাবা মাহমুদ হোসেন তালুকদার (৩৯)। ছুটিতে বেড়াতে এসে আবদুল্লাহর দেখা হয় তাঁর ১৫ বছর বয়সী পুরোনো কিশোর বন্ধুর সঙ্গে। গত বুধবার সকালে বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে বন্দরটিলার আলী শাহ মাজার গলিতে নিজ বাসায় আসে আবদুল্লাহ। এর কিছুক্ষণ পর সে হামিদ আলী টেন্ডলের গলিতে ওই বন্ধুর বাসায় যায়। এরপরই মুঠোফোনে ফ্রি ফায়ার গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুজন। মুঠোফোনে খেলাকে কেন্দ্র করেই এই মর্মান্তিক খুনের ঘটনা ঘটে।

কিশোর আবদুল্লাহর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা (পশ্চিম/বন্দর) বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আলী হোসেন

পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যার দিকে আবদুল্লাহর বাবার মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে একটি ফোন আসে। এরপরই ইপিজেড থানায় আসেন তিনি। এদিন রাতেই নগরের ইপিজেড এলাকার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি শুরু করে নগর পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে গতকাল বিকেলে নগরের ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানা থেকে আবদুল্লাহ হত্যায় জড়িত কিশোরের মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আনোয়ারা উপজেলায় পানির ট্যাংকি এলাকা থেকে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেন, পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সময় পেতে তাঁরা আবদুল্লাহর বাবাকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। একফাঁকে রাতে আবদুল্লাহ লাশ বস্তাবন্দী করে দুই ভবনের ফাঁকে ফেলে যান তাঁরা।