পানিতে তলিয়ে গেছে সড়ক। রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকায়
পানিতে তলিয়ে গেছে সড়ক। রোববার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকায়

সাতক্ষীরায় এখনো অনেক গ্রাম প্লাবিত, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী

ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ সাত দিন পর সংস্কার করা হলেও এখনো অনেক গ্রাম প্লাবিত অবস্থায় আছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সড়ক ডুবে যাওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সাতক্ষীরার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার ও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনে সাতক্ষীরায় ২৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেতনা নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিনেরপোতা শ্মশানঘাট এলাকা ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যায়।

পাউবো বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বেতনা নদীর অনেক স্থানে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানিনিষ্কাশন হচ্ছে না। তবে যেসব স্থানে পলি জমেছে, সেসব স্থানে এ সপ্তাহে খনন করে পানি সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

রোববার দুপুরে গোপীনাথপুর গ্রামে গিয়ে যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি চোখে পড়ে। পানির মধ্যে যেন বাড়িগুলো জেগে আছে, তবে বাড়িগুলোতে তেমন মানুষ চোখে পড়েনি। সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে লোকজনকে চলাচল করতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবার ভেলায় করে যাতায়াত করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরার তালার ইসলামকাটি, খলিশখালি দোদুয়া, শ্রীমন্তকাটি, দক্ষিণ নগরঘাটা, আহসাননগর, হরিণখোলা গোলাপোতা, গাছা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, তলুয়া, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, বিনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তালতলা, মেটেরডাঙ্গা, ঘুটেরডাঙ্গি, রামচন্দনপুর, লবণখোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, মাছখোলা, ধুলিহর, শ্যালে, দামারপোতা, বালুইগাছ, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবেসতিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গি, মেঠোপাড়াসহ ৫০ গ্রামে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভা এলাকার ইটেগাছা, কুকরালি, মেহেদিবাগ, খানপুর, পলাশপোল, রসুলপুল, রথখোলা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, সুদরডাঙ্গিসহ ২৫টি গ্রাম প্লাবিত অবস্থায় আছে। এসব এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা গোপীনাথাপুর গ্রামের দিনমজুর দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর বসতঘরে পানি থই থই করছে। বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের পাশে একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

গোপীনাথপুর গ্রামের জয়নব বিবি বলেন, তাঁর বাড়ির আঙিনায় হাঁটুপানি। পানি সরছে না। সড়কেও একই অবস্থা। একই এলাকায় আব্দুল কদ্দুসের ভাষ্য, তাঁর ঘরের মধ্যে পানি। কোনোরকমে চৌকি উঁচু করে বসবাস করছেন। রোদ না ওঠা পর্যন্ত পানি সরবে না বলে মনে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা শহরের ইটেগাছা এলাকার বাসিন্দা ও জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব আলী নূর খান বলেন, তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে হচ্ছে হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে। ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকায় এবং যেখানে–সেখানে ঘের দিয়ে মাছ চাষ করায় পৌর এলাকার তিন ভাগের এক ভাগে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে মানুষ চরম কষ্টের মধ্যে বসবাস করছেন।