সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম। আজ সকালে গুল্টা গ্রামে
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম। আজ সকালে গুল্টা গ্রামে

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ

‘শীতে কম্বলের ঠেকা আছিল, তোমরা দিয়া আমার বেটার কাম করলা’

ঘড়িতে তখন সকাল প্রায় সাতটা ছুঁই ছুঁই। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে শীত ও কুয়াশার মাত্রা ছিল বেশি। এ সময়েই ধানগড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় প্রবেশ করে প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতিনিধিদল। সেখানে ১৮ ছাত্রের হাতে তুলে দেওয়া হয় কম্বল। সুশৃঙ্খলভাবে কম্বলগুলো সংগ্রহের পর আনন্দ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক ও হাফেজ মো. জিহাদুল ইসলাম বলেন, শীতের মৌসুমে ছাত্রদের জন্য প্রথম আলোর এমন সহযোগিতা খুব ভালো হয়েছে।

মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে কুয়াশাকে সঙ্গী করে প্রতিনিধিদল ছুটে যায় সোনাখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম আটঘরিয়া গ্রামের দিকে। সেখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাহাতোদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষের বসবাস। গ্রামটির একটি বড় উঠানে ভোরবেলা থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন শতাধিক মানুষ। তাঁরা আগেই কম্বল বিতরণের টোকেন পেয়েছিলেন। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সবার হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল।

গ্রামটির বাসিন্দা সরস্বতী রানী মাহাতো কম্বল দেখিয়ে বলেন, ‘জাড়ে (শীতে) খুবই কষ্ট হইতেছিল। আপনাদের দেওয়া কম্বলে আইজ থেকে ওম পাওয়া যাবে।’ পাশ থেকে হামজেলা হোসেন (৭৫) বলে ওঠেন, ‘শীতে একটা কম্বলের ঠেকা আছিল। তোমরা কম্বলখান দিয়া আমার বেটার কাম করলা।’ কম্বল পেয়ে বেশ আনন্দিত দেখাচ্ছিল শুকরা রানীকে (৭০)। তিনি বলেন, ‘এ কম্বল আমার কাজে লাগবে।’ একই ধরনের কথা বলেন আরও কয়েকজন।

সেখানে অন্তত ১৩২ জনকে কম্বল বিতরণ করা হয়। বিতরণের কাজে অংশ নেন যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খ ম রেজাউল করিম। তিনি প্রথম আলো ট্রাস্টের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, খবর পরিবেশনের পাশাপাশি মানুষের জন্য এমন কাজ পত্রিকাটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাসস্ট্যান্ড হাফিজিয়া মাদ্রাসা চত্বরে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় কম্বল

এই বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন পুল্লাহ দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সরকার, ভূঞাগাঁতী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক দিলীপ কুমার সিংহ, মিসাবের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল কুমার মাহাতো, প্রথম আলো রায়গঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি উজ্জ্বল কুমার মাহাতো, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, সদস্য রাকিবুল হাসান, দুর্জয় কুমার মাহাতো, বিজয় কুমার মাহাতো, ইউপি সদস্য সুরেশ চন্দ্র মাহাতো, প্রথম আলোর রায়গঞ্জ প্রতিনিধি সাজেদুল আলম প্রমুখ।

পরে দুপুর ১২টার দিকে তাড়াশ উপজেলার গুল্টা গ্রামের শীতার্ত ৭৩ জনের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। এদিন রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্ত মোট ২৫০ জনকে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়। বিতরণের কাজে সহায়তা করেন রায়গঞ্জ বন্ধুসভার সদস্যরা।

কম্বল পেয়ে সন্তানকে পরম মমতায় কোলে জড়িয়ে রাখেন দুই মা। রায়গঞ্জ উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামে

শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য দুই দিন ধরে দুই উপজেলার এসব গ্রামে গিয়ে যাচাই-বাছাই করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে টোকেন বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। গুল্টা গ্রামে কম্বল নিতে এসেছিলেন পাশের মানিকচাপড় গ্রামের ৮০ বছরের রহিম তির্কী। তিনি কম্বলটি হাতে পেয়ে বলেন, এই শীতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কম্বলটা পেয়ে কনকনে শীত থেকে এখন রক্ষা হবে।

কম্বল পেয়ে গুল্টা বাজার পাড়ার ঘিবালা দাস্যা (৯০) বলেন, ‘মাটির দেয়াল আর টিনের চালার বাড়িত থাকি। ঘরের মধ্যে থাকলেও অনেক জাড় লাগে। সকাল আর সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে গেলে খুব জাড় লাগে। এই কম্বল গায়ে দিয়ে এখন বাইরে বের হলে জাড় লাগবে না।’

কম্বল বিতরণের কাজে অংশ নেন সমাজসেবক নিত্যগোপাল তির্কী, নিখিল খাঁখাঁ, প্রণব ওঁরাও, স্থানীয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রণজিৎ এক্কা, শিবপ্রসাদ এক্কা প্রমুখ।