নবজাতক
নবজাতক

তৃতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় নবজাতককে বিক্রি করে দিলেন বাবা

আগের দুই সন্তান মেয়ে। তৃতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় তাকে বিক্রি করে দিলেন বাবা। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত বাবা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। নবজাতকের বাবা এ নিয়ে একেকবার একেক ধরনের কথা বলছেন। তিনি একবার দাবি করেন, হাসপাতালের বিল দিতে না পারায় তিনি সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এরপর বলেন, তিনি সন্তানকে বিক্রি করেননি, এক আত্মীয়ের কাছে রাখতে দিয়েছেন।

হাসপাতাল, জনপ্রতিনিধি ও নবজাতকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নে ওই অটোরিকশাচালকের স্ত্রীর প্রসববেদনা উঠলে গত ২৭ জুন রাতে উপজেলার দোভাষী বাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

২৯ জুন সকালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। পরে নবজাতকের বাবা গতকাল মঙ্গলবার এক দম্পতির কাছে ৫০ হাজার টাকায় সন্তানকে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই দম্পতি ১৪ বছর ধরে নিঃসন্তান। গতকাল সকালে ওই হাসপাতালে এক আত্মীয়ের জন্য রক্ত দিতে গিয়ে বিষয়টি দেখতে পান পারভেজ হোসেন নামের এক যুবক। নবজাতক বিক্রির বিষয়টি জানতে পেরে তিনি কৌশলে ওই শিশুর একটি ছবি তুলে রাখেন। পরে এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি।

ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অনেকেই এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এর মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালের বিলের টাকা পরিশোধ করে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবজাতকের বিষয়টি সামনে আনা যুবক পারভেজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুক্তিপত্র করে মেয়েকে বিক্রি করেছেন নবজাতকের বাবা। হাসপাতালের বিলের টাকা আমি পরিশোধ করতে চেয়েছি। অনুরোধ করেছি, যাতে তিনি সন্তানকে বিক্রি না করেন। তবে তিনি রাজি হননি।’

যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ওমর ফারুক বলেন, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে নবজাতকের মা-বাবা বিল পরিশোধ করে তাকে নিয়ে গেছেন। নবজাতকটি বিক্রি হওয়ার বিষয়ে তাঁরা কিছু জানেন না।

বিষয়টি জানার জন্য গতকাল রাত ৯টার দিকে ওই অটোরিকশাচালকের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাইরে অনেক মানুষের জটলা। ফেসবুকে বিষয়টি জানাজানি হলে বাড়ির বাইরে ভিড় জমায় লোকজন।

নবজাতকের বাবা ঘরেই ছিলেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা না থাকায় তাঁর এক আত্মীয় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন। কিছুদিনের জন্য তাঁরা নবজাতককে তাঁদের বাড়িতে রাখতে দিয়েছেন। বিক্রি করেননি।

কিছুক্ষণ পর ওই বাড়িতে আসেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. এনাম। তাঁর কাছে নবজাতকের বাবা সন্তানকে বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাঁর আগের দুটি কন্যাসন্তান। এটিও কন্যাসন্তান হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নবজাতককে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। বিক্রির বিষয়ে একটি চুক্তিপত্রও করা হয় বলে তিনি জানান। নবজাতকের মা কোনো কথা না বললেও কান্নাকাটি করছিলেন।

এ সময় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে স্থানীয় এক ব্যক্তি সব টাকা পরিশোধ করে নবজাতকে মা–বাবার কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ওই সংগঠন থেকে নবজাতকের লালন-পালনের খরচও দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবজাতক বিক্রি করার বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তীও বিষয়টি জানেন না বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নেবে বলে জানান তিনি।