বগুড়ায় নিখোঁজ হওয়ার ১৮ ঘণ্টা পর প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে মাহাদী ইসলাম (৫) নামের এক শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোরের দিকে শহরের নিশিন্দারা ধমকপাড়া এলাকায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে অপহরণের পর হত্যায় জড়িত সন্দেহে তাহমিনা খাতুন (৩০) নামের এক নারীকে আটকের পর পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন এলাকাবাসী।
নিহত মাহাদী ওই এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের ছেলে। আটক তাহমিনা খাতুন শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের জানগ্রামের গ্রিলমিস্ত্রি আনিস মণ্ডলের স্ত্রী। তাঁরা ধমকপাড়ায় শিশুটির পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
সদর থানা-পুলিশ বলছে, লাশের পাশ থেকে শিশুটির হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার কথা লেখা আছে। পুলিশ ধারণা করছে, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। এরপর শিশুটিকে তাঁর পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে চিরকুট লিখতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু চিরকুটটি পরিবারের কাছে পৌঁছানোর আগেই কোনো কারণে তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
পুলিশ ও পরিবারের লোকজন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার পর মাহাদী বাড়ির বাইরে খেলাধুলা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। আজ সকালে প্রতিবেশী রতনের বাড়ির ভাড়াটিয়া তাহমিনা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরা লাশ সরানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলেন। পরে বস্তাবন্দী লাশ ফেলে পালানোর চেষ্টা করলে এলাকাবাসী তাহমিনাকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করেন।
শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমার ছেলে নিখোঁজ হয়। এর পর থেকে তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। মাহাদীর কোনো সন্ধান না পেয়ে গতকালই বগুড়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। আজ ভোর পাঁচটার দিকে নিশিন্দারা ধমকপাড়ায় তাহমিনার বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বস্তাবন্দী লাশ সরানোর দৃশ্য দেখে ফেলেন স্বপন মিয়া নামের এক প্রতিবেশী। ধাওয়া করলে তাহমিনা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। সকাল আটটার দিকে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এলাকার সেলিম মিয়া নামের একজনের দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজেও দেখা যায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মাহাদীর হাত ধরে প্রতিবেশী তাহমিনা তাঁর বাড়ির দিকে গেছেন।’
বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রথম আলোকে বলেন, সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে পুলিশ একটি বাড়ি থেকে মাহাদী ইসলাম নামের পাঁচ বছরের ওই শিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এলাকাবাসী তাহমিনা নামের এক নারীকে আটকের পর মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। তাঁকে চিকিৎসা শেষে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।