এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা

‘ফিরবে না জানলে তাঁকে বের হতে দিতাম না’

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামী অনাদি রঞ্জন মজুমদারের লাশ শনাক্ত করেন অনিতা দত্ত। পরে মুঠোফোনে তিনি বিষয়টি তাঁর স্বজনদের জানান। আজ রোববার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ছবি: অজয় কুন্ডু

স্বামী-স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরিজীবী। শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকায় তাঁরা চলে যান নিজ বাড়ি বাগেরহাট শহরে। তবে এই সপ্তাহে দুজন নয়, স্ত্রীকে রেখেই গ্রামের বাড়িতে যান অনাদি অনাদি রঞ্জন মজুমদার (৫৫)। আজ রোববার সকালে ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিতে গোপালগঞ্জ থেকে বাসে ওঠেন তিনি। পথে মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

অনাদি রঞ্জন মজুমদার গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি)। তাঁর স্ত্রী অনিতা দত্ত ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষক।

দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন অনিতা দত্ত। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছেলে অর্ণব মজুমদার। স্বামীর লাশ শনাক্তের পর ভেঙে পড়েন তিনি। আহাজারি করতে করতে অনিতা দত্ত বলেন, ‘সকালেও ফোনে কথা হলো। বলল, ঢাকায় ট্রেনিং শেষ করে আজই ফিরে আসবে। এমন হবে জানলে ঢাকায় যেতে দিতাম না। আমার সুখের সংসারে আর সুখ রইল না।’

বাবার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ছেলে অর্ণব। তিনি বলেন, ‘কিছু বলতে পারছি না আমি। বাবার চেহারা দেখার পর দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। ঈশ্বর আমাকে এমন দিন দেখাল কেন?’

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সূত্র জানায়, আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত দুজন মারা যান। ঢাকা মেডিকেলে আরও ১০ জন চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া আহত আরও ২৫ জন শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জনের নাম–পরিচয় পাওয়া গেছে। বেলা তিনটার মধ্যে ১৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। একটি লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। অপর দুটি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে।