টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার হাজারো লোকজন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। দীঘিনালার সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি এবং লংগদু উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ২১ দিনের মাথায় এ নিয়ে জেলায় তৃতীয়বারের মতো বন্যা দেখা দিল।
আজ বুধবার নতুন করে পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালার কবাখালী ও মেরুং ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞান বিকাশ চাকমা বলেন, টানা ভারী বৃষ্টিতে কবাখালী ও মেরুং ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক শ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। দুই ইউনিয়নে ৬৫০ জনের মতো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও বেশির ভাগ পানিবন্দী মানুষ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আরও চারটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলায় ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে। উপজেলার সঙ্গে পাশের রাঙামাটির লংগদু এবং রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে।
চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহরের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো সকালে ঘরে ফিরেছে। তবে চেঙ্গী নদীর পাড়ে অবস্থিত নিচু এলাকাগুলোতে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে পুকুরের মাছ এবং ফসলি জমি।
আজ সকালে সরেজমিন দেখা যায়, খাগড়াছড়ি শহরের গঞ্জপাড়া, নিচের বাজার, শব্দমিয়াপাড়া এলাকায় কয়েকটি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। অন্য এলাকাগুলো থেকে পানি সরে গেছে। গোলাবাড়ি এলাকার কৃষক অংগ্যজাই মারমা বলেন, ‘নদীর পাড়ে জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ১২০টি পেয়ারাগাছ এবং বেগুন লাগিয়েছিলাম। কিছুদিন আগের বন্যায় পানিতে ডুবে বেগুনগাছগুলো মরে গেছে। এবারের বন্যায় পেয়ারাগাছগুলোও মারা যাবে।’
খাগড়াছড়ি সদর কৃষি কর্মকর্তা মুক্ত চাকমা বলেন, অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পরপর তিনবারের বন্যার কারণে। এবারের বন্যায় কতজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এখনো তালিকা করা হয়নি। সোমবারের মধ্যে জানা যাবে।
আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলোকে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিএনপির পক্ষ থেকে খাবার ও পানি বিতরণ করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, বন্যাকবলিত লোকজনের জন্য ৪০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের লোকজন যাতে বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার পান, এটি নজরে রাখা হচ্ছে।
২১ দিনের মাথায় আবারও বন্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী নিকেল চাকমা বলেন, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। আবার খাগড়াছড়ি শহরের বেশির ভাগ ছোট ছোট ছড়া এবং নালা ভরাট হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।