বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাইতে গিয়ে মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়ে সাদিয়া তালুকদার। মঙ্গলবার সকালে বরগুনা পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে
বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাইতে গিয়ে মানববন্ধনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়ে সাদিয়া তালুকদার। মঙ্গলবার সকালে বরগুনা পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে

কী অপরাধ করেছিল আমার বাবা, মানববন্ধনে প্রশ্ন মেয়ের

‘আমার বাবাকে মারধর করে ফেলে রেখেছিল। আহতাবস্থায় একটু পানি খেতে চেয়েছিল। এতটাই নির্মম তারা বাবাকে একটু পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। কী এমন অপরাধ করেছিল আমার বাবা। আমার বাবা কেন প্রেসক্লাবে গিয়েছিল, এই অপরাধে তাঁকে মেরে ফেলতে হবে।’ বরগুনা প্রেসক্লাবে আটকে মারধরের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের মেয়ে সাদিয়া তালুকদার ওরফে তন্নি বাবা হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধনে এসব কথা বলেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে বরগুনা শহরের পৌর সুপারমার্কেটের সামনের সড়কে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে নিহত সাংবাদিকের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী অংশ নেন। এতে নিহতের স্ত্রী সাজেদা, মেয়ে সাদিয়া তালুকদার ও ছেলে তানহা তালুকদার বক্তব্য দেন।

বাবার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাদিয়া তালুকদার বলেন, ‘বাবা হারানোর কী বেদনা, যাদের বাবা নেই, শুধু তারাই বুঝতে পারে। ঘটনার সময় বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, আমাকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। আমি ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু আমাকে প্রেসক্লাবে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে পুলিশ আহতাবস্থায় বাবাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। আমার বাবাকে কারা, কীভাবে মেরেছে, সব ভিডিওতে বলেছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার চাই।’

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবে তালুকদার মাসউদকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার তিনি মারা যান। তালুকদার মাসউদ দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার দুপুরে তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে এনটিভির জেলা প্রতিনিধি আ স ম হাফিজ আল আসাদসহ ১৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করেন।

তালুকদার মাসউদ

মামলার পর থেকে আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্ত্রী ও মামলার বাদী সাজেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘মামলার পর আসামিরা আমাকে কল করে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে মামলা ওঠাতে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কিত। আমরা অনিরাপদ। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।’

সমাবেশে বরগুনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র রইসুল আলম ওরফে রিপন, বরগুনা সদর উপজেলা ইউপি সদস্য অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দীন, খেলাঘরের বরগুনা জেলার সাধারণ সম্পাদক ও মাছরাঙা টিভির বরগুনা প্রতিনিধি মুশফিক আরিফ, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ওরফে ফসল, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রুদ্র রুহান, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক মুশফিক আরিফ বলেন, ‘এনটিভির সাংবাদিক হাফিজ প্রেসক্লাবে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সাংবাদিকতার নামে গুন্ডা বাহিনী তৈরি করেছিলেন। সেই বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে তালুকদার মাসউদ নিহত হয়েছেন। ওদের পরিচয় কেবল খুনি, হত্যাকারী। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাফিজ আল আসাদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা কাদের গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মামলা হওয়ার বিষয়টি শুনেছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনায় মাসউদ আহত হলেও চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে তিনি বরগুনায় এসেছিলেন। পরে অসুস্থ হয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হন বলে শুনেছেন।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক হেলাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।