নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই পক্ষের টেঁটাযুদ্ধে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। শরীরে টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় সাতজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের মধ্যে দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আজ সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে চরদিঘলদী ইউনিয়নের চরদিঘলদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সাতজন হলেন চরদিঘলদী গ্রামের নাজিম উদ্দিন (৫২), মো. সবুজ মিয়া (৩৫), কবির মিয়া ( ৪৪), মনোয়ার মিয়া (৪৫), শাকিল মিয়া (২৫), এমদাদুল মিয়া (২৮) ও আবদুল মিয়া (৪০)। বাকিদের বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়ায় তাঁদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার জানান, চরদিঘলদী থেকে টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় এই পর্যন্ত সাতজন হাসপাতালে এসেছেন। সবারই শরীর থেকে টেঁটা অপসারণ করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য নাজিম উদ্দিন ও শাকিল নামের দুজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনজনকে পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
থানা-পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চরদিঘলদী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। একপক্ষে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী প্রধান এবং অন্য পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রশিদ মুন্সী। শওকতের পক্ষে ইকবাল এবং রশিদের পক্ষে ইউনুস দুই পক্ষের নেতৃত্ব দেন। দলে তাঁদের কোনো পদ আছে কি না, তা–ও জানা যায়নি।
এলাকার লোকজন বলেন, পূর্ববিরোধের জের ধরে প্রায় ৯ মাস ধরে বিএনপির লোকজন এলাকাছাড়া। তিন-চার দিন আগে বিএনপি পক্ষের মো. আরমান মিয়া নামের এক প্রবাসী এলাকায় ফেরেন। ওই দিনই তাঁর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে তাঁকে মারধর করেন আওয়ামী লীগ পক্ষের লোকজন। তখন বিএনপিপন্থী লোকজন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবাদুল্লাহর বসতঘর ভেঙে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইকবালের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের লোকজন বিএনপির বেশ কিছু ব্যক্তিকে মারধর করেন।
এসব ঘটনার জেরে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ইউনুসের নেতৃত্বে এলাকার বাইরে থাকা শতাধিক বিএনপির লোক এলাকায় প্রবেশ করেন। তাঁরা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে টেঁটাবিদ্ধ করেন। প্রতিপক্ষও টেঁটা হাতে প্রতিরোধ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ জন টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে খবর পেয়ে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবির মিয়া বলেন, ‘১৫ বছর পর মালয়েশিয়া থেকে সম্প্রতি এলাকায় ফিরেছিলাম। এলাকায় কী চলছে, তা–ও জানতাম না। ভোরে তারা হঠাৎ হামলা চালালে আমি সামনে পড়ে যাই। তারা আমার হাত, পাসহ পাঁচ জায়গায় টেঁটা বিধিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পর শরীর থেকে এসব টেঁটা অপসারণ করা হয়।’
বক্তব্য জানতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী প্রধান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবদুর রশিদ মুন্সীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেন এই প্রতিবেদক। প্রতিবারই তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসাইন জানান, প্রবাসীকে মারধরের ঘটনার জেরেই সোমবারের এ সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি থমথমে এবং পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেন জানান, ‘বিএনপির লোকজনই প্রথমে হামলা চালান। তাঁদের প্রতিহত করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতগুলো মানুষ টেঁটাবিদ্ধ হওয়া দুঃখজনক। বছরখানেক আগে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে খাওয়াদাওয়া করে মিলিয়ে দিয়েছিলাম। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আবার তাঁরা মুখোমুখি হয়েছেন।’
টেঁটাযুদ্ধের এই ঘটনাকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিষয় বলতে নারাজ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু সালেহ চৌধুরী। তিনি বলেন, মূলত এলাকার ‘গ্রুপিংকে’ কেন্দ্র করে দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি লোকজন দল ভুলে টেঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলে পড়ে। স্থানীয় লোকজন সচেতন না হলে এমন বর্বরতা সহজে বন্ধ হবে না।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কিছু ব্যক্তি টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। তবে আহত ব্যক্তিদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।