বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের দুজনসহ কয়েকটি জেলায় স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হওয়া ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় জেলার নয়টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে জেলার সাড়ে সাত লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলছেন, তাঁদের দাবি আদায় না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরিচ্যুত হওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মো. মকবুল হোসেন ও নবীনগর উপজেলার উপমহাব্যবস্থাপক মো. আসাদুজ্জামান। বহিষ্কারাদেশ থেকে জানা যায়, পল্লী বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করায় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্দেশনার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং দাপ্তরিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চাকরি বিধি অনুযায়ী চাকরি থেকে তাঁদের অবসান দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, জেলা সদর, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলার আংশিক কয়েকটি এলাকাসহ বাকি ছয়টি উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় পড়েছে। জেলার নয়টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাড়ে সাত লাখ বাণিজ্যিক ও আবাসিক গ্রাহক রয়েছে। বিভিন্ন জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ঘাটুরা কার্যালয়ে জড়ো হন। চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত সবার ক্ষেত্রে অভিন্ন সার্ভিস কোড চালু এবং অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিত করার দাবিতে বেলা ১১টার দিকে নয়টি উপজেলার বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়নি। সেই সঙ্গে সমিতির কার্যালয়ে কর্মচারী-কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করছেন।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) আবু সায়েম, কসবা উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, নাসিরনগর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন, সদর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক নূরে আলম, কসবা উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান, নাসিরনগরের সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম ও জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ অলিউল্লাহর সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তাঁর কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাষ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ৭৫০ জন কর্মরত আছেন। আর সারা দেশে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব অনিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দুই দফা দাবি তোলা হয়। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে দাবি বাস্তবায়নে তাঁরা বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করেছেন। বিদ্যুৎ সচিবসহ প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের দাবিকে যৌক্তিক বললেও তা বাস্তবায়ন না করে উল্টো তাঁদের কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একজনকে আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। যা তাঁদের উদ্বিগ্ন করেছে। চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের চাকরি পুনর্বাহালের দাবি আদায় না হলে তাঁরা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখবেন।
এদিকে দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ, সদর থানার ওসি মোজাফফর হোসেন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে যান। তাঁরা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে বিদ্যুৎ–সংযোগ চালুর জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানান। বিকেল পৌনে চারটার দিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সদর ইউএনও থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ইউএন মোহাম্মদ সেলিম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু করতে তাঁদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগ চালুর চেষ্টা করছেন তাঁরা।