গ্রামীণ ঐতিহ্যের হাঁড়িভাঙা, হাডুডু, কাবাডি, হাঁস ধরা, বালিশ চেয়ার, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, বস্তার ওপরে বসে টানা দৌড়, মেরুদণ্ডের শক্তি পরীক্ষাসহ প্রায় ২২ রকমের খেলায় মেতে ওঠে যশোর সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার ওই গ্রামের যুব সম্প্রদায় এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলায় অংশ নিয়ে অনেকেই যেন ফিরে গেছেন শৈশবে। অতীতের স্মৃতিচারণা করলেন অনেকেই। এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন দেখতে আশপাশের গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের সহস্রাধিক দর্শকের সমাগম হয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ও যশোর সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাগুলোকে আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ আয়োজন। শিশুরা এখন মুঠোফোনের আজব বাক্সে বন্দী। ভুলতে বসেছে গ্রামীণ সব ঐতিহ্য। অনেকেই আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এই ধরনের তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলবে।
আকবর ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘এ ধরনের খেলাধুলা এখন আর হয় না গ্রামে। আগে এ ধরনের আয়োজন পাড়ায় পাড়ায় হতো। অনেক দিন পর এ ধরনের খেলাধুলা করতে পেরে শৈশবে ফিরে গেলাম।’
এ ধরনের খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে গ্রামটির বাড়ি বাড়ি উৎসবে রূপ নিয়েছে। খেলাধুলা দেখতে স্বজনেরাও এসেছেন বেড়াতে। এমনই একজন কাকলি বেগম। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজন এখন আর হয় না। শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছি এ ধরনের খেলাধুলা দেখতে। ছোটবেলার খেলাধুলায় অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। ছোট–বড়–বৃদ্ধরা বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে নিজ পারদর্শিতায় হয়েছেন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়।’
দীর্ঘদিন পর হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ এসব খেলাধুলা দেখে মুগ্ধ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এসব খেলাধুলা দেখে শৈশবে ফিরে গেলাম। এখন আর এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন গ্রামে গ্রামে হয় না। তাই তো গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় মানুষের মধ্যে বন্ধন, হৃদ্যতা কমে যাচ্ছে। সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে এমন আয়োজন বেশি বেশি করা উচিত।’