গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ভোটকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর করা ঘরবাড়ি পরিদর্শন করেছেন গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে তিনি উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পাড়াকচুয়া গ্রামে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সংসদ সদস্য শিবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তহিদুল ইসলাম ওরফে শাহীনের বাড়ির উঠানে গ্রামবাসীদের নিয়ে বৈঠক করেন। তিনি ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। সংসদ সদস্য গ্রামবাসীদের উদ্দেশে বলেন, হামলাকারী যে–ই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন সকালে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বিরোধের জেরে পাড়াকচুয়া গ্রামে কয়েকটি ঘরবাড়ি, আসবাব ভাঙচুর ও খড়ের পালা জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ প্রধান (মোটরসাইকেল প্রতীক) এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাকিল আলম (আনারস প্রতীক)। বেসরকারি ফলাফলে শাকিল আলম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল আটটায় উপজেলার সব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল লতিফের কয়েকজন সমর্থক মোটরসাইকেলযোগে শিবপুর ইউনিয়ন কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন, পথে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাকিলের সমর্থক শিবপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তহিদুলের লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে আবদুল লতিফের সমর্থক আবু তাহের ও নিপু মিয়া নামের দুজন আহত হন। পরে তাঁদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন পাড়াকচুয়া গ্রামে গিয়ে ঘরবাড়িতে হামলা করেন। তাঁরা পাড়াকচুয়া গ্রামে তহিদুল ইসলামের বাড়ির আসবাব ও আশপাশের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় তাঁরা বাড়ির উঠানে রাখা কয়েকটি খড়ের পালায় আগুন লাগিয়ে দেন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তবে আবদুল লতিফের কয়েকজন সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তহিদুল ইসলাম। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে বা কারা হামলা করেছে, তা আমি জানি না। আমার কোনো লোক হামলা করেনি।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘শাকিল আলমকে সমর্থন করায় আবদুল লতিফের সমর্থকেরা আমার বাড়িতে হামলা করে আসবাব ভাঙচুর করে এবং কয়েকটি খড়ের পালায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা আশপাশের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই গ্রামের অদূরে শোলাগাড়ি ঈদগাহ আলিম মাদ্রাসার কমিটি নিয়ে অনেক আগে থেকে তহিদুল ইসলাম ও শোলাগাড়ি ঈদগাহ আলিম মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জালাল আহম্মেদ ওরফে রুমির বিরোধ চলছিল। এর জেরে তাঁরা নিজেরাই কিছু বাড়িতে আগুন লাগিয়েছেন এবং ভাঙচুর করেছেন।’
এদিকে এ ঘটনায় আজ বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেননি বলে জানান গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুল আলম শাহ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শোলাগাড়ি ঈদগাহ আলিম মাদ্রাসার কমিটি নিয়ে তহিদুল ইসলাম ও ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি জালাল আহম্মেদের বিরোধ চলছে। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা আছে। আমি নিজেও উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছি। এর জেরে নির্বাচনের দিন ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও খড়ের পালায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।’ ওসি আরও বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে।