কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে যৌতুকের দাবি করে না পেয়ে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই গৃহবধূর নাম মিম আক্তার (২০)।
এ ঘটনার বিচার দাবি করে শুক্রবার দুপুরে উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মুড়িকান্দি গ্রামে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন ওই গৃহবধূর বাবার পরিবারের লোকজন ও স্বজনেরা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, দুই বছর আগে উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ গণেশপুর চামটা গ্রামের আবু বাক্কারের ছেলে মো. রিয়াজ মিয়ার (২৬) সঙ্গে মিম আক্তারের বিয়ে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মিম আক্তারের দিনমজুর বাবা রোকন উদ্দিন, মা মাকসুদা আক্তার, দাদা মো. সামছুদ্দিন, চাচা মো. দুলাল খলিফা, মো. ফারুক ও ফুফু আঙ্গুরা খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, বিয়ের এক বছর পর স্ত্রী মিম আক্তারের কাছে যৌতুক হিসেবে এক ভরি স্বর্ণলংকার, মোটরসাইকেল ও আসবাব দাবি করেন রিয়াজ মিয়া। এটা নিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন মিম। একপর্যায়ে বাবার বাড়ি মুড়িকান্দি গ্রামে চলে আসেন তিনি। মাসখানেক পর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে মেয়েকে রিয়াজের বাড়িতে দিয়ে আসেন মিমের বাবা রোকন উদ্দিন। কিন্তু দুই মাস পর যৌতুকের জন্য মিমের ওপর আবার নির্যাতন শুরু করেন রিয়াজ, ভাসুর জিকু মিয়া, শাশুড়ি রিনা আক্তার, দুই ননদ আনোয়ারা ও চায়না আক্তার। যৌতুক না দেওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে মিম অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরপরও তাঁর ওপর নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
সম্প্রতি মিমের মা মাকসুদা আক্তার তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে একটি স্মার্টফোন উপহার পান। সেটি এনে দেওয়ার জন্য মিমকে চাপ দিতে থাকেন রিয়াজ। এটা নিয়ে নতুন করে শুরু হয় নির্যাতন। এরপর ৬ মে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন রিয়াজের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মিমের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
সংবাদ সম্মেলন শেষে মানববন্ধন করা হয়। এতে স্বজনেরা ছাড়াও এলাকার কয়েক শ নারী-পুরুষ অংশ নেন। এ সময় এলাকাবাসী অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ‘মিম হত্যা’র বিচার দাবি করে পরিবারের সদস্যরা বলেন, যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতনের মাধ্যমে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিম আক্তারকে হত্যা করেন। এরপর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আত্মহত্যার নাটক সাজান তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মিম আক্তারের স্বামী রিয়াজ মিয়ার মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। নিহত মিমের চাচা মো. ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরে তাঁরা এ বিষয়ে মামলা করতে করিমগঞ্জ থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে বলেন। সে জন্য এখনো তাঁরা এ ঘটনায় মামলা করেননি।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুল আলম সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।