শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের ২০টি বসতঘর ও ৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের দক্ষিণ গোয়ালদি, গোয়ালদি ও রঙের বাজার এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
নির্বাচনে বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাখাওয়াত হাওলাদারের সমর্থক তুলাসার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ও পরাজিত প্রার্থী ইকবাল হোসেনের সমর্থক একই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জামাল হোসেন ফকিরের লোকজন এসব হামলায় অংশ নেন। এ ঘটনার জেরে প্রার্থী ইকবাল হোসেনের মামা সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব মোর্শেদের বাড়িতেও হামলা করা হয়।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা-পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল নির্বাচনের পর সন্ধ্যার দিকে বিজয় মিছিল করার সময় জাহিদুল ইসলাম ও জামাল হোসেনের লোকজন সংঘর্ষে জড়ান। জামালের লোকজন জাহিদুলের লোকজনের কয়েকটি বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করেন। এ সময় সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। পরে দুই পক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত রঙের বাজার, দক্ষিণ গোয়ালদি ও গোয়ালদি গ্রামের কয়েকটি বসতঘর ভাঙচুর করেন। ওই সময় পরাজিত প্রার্থী ইকবাল হোসেনের ভাড়া দেওয়া দোকানঘর ও তাঁর স্বজনদের বসতঘর ভাঙচুর করা হয়। তখন দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরও ১০ আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ব্যক্তিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেনের মামা মাহাবুব মোর্শেদ তুলাসার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। গতকাল রাত ১২টার দিকে জাহিদুলের সমর্থকেরা তাঁর বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন শতাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মাহাবুব মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা ইকবালের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করেছি। এর জেরে জাহিদুলের লোকজন আমার বাড়িতে হামলা করেছেন। এলাকার লোকজন এগিয়ে না এলে আমার বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট চালানো হতো।’
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর বিজয় মিছিল করছিল আমার লোকজন। জামাল ফকিরের লোকজন ওই মিছিলে হামলা করে। তারাই আমার লোকজনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।’
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান জামাল হোসেন ফকির বলেন, ‘ফলাফল ঘোষণা করার পর জাহিদুল ইসলামের লোকজন আমার লোকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমার লোকজনের ওপর হামলা করেছে। আমরা এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেব।’
স্থানীয় বিরোধের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে মন্তব্য করে বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমার নির্বাচনের কোনো বিষয় নিয়ে তুলাসারের ওই ঘটনা ঘটেনি। আমার সমর্থকদের সব ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করার জন্য বলা হয়েছে।’ পরাজিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের সমর্থন করা নিয়ে তুলাসারের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা বিরোধে জড়িয়েছেন। এক পক্ষ ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ করেছেন। ওই অভিযোগ মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। অন্য পক্ষ এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।