১৮ ঘণ্টা ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় আবার লাঠিসোঁটা, রামদাসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে গত বুধবার রাতে এক দফা ও গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দফায় সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ।
সংঘর্ষে জড়ানো ছাত্রলীগের এ দুটি পক্ষ হলো সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)। এর মধ্যে সিএফসির নেতা-কর্মীরা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও সিক্সটি নাইন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, গতকাল রাতের সংঘর্ষের ঘটনা পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তবে দুই পক্ষের উত্তেজনা কমেনি। আজ বিকেল চারটায় সিএফসির কয়েকজন কর্মী স্টেশন এলাকায় যাচ্ছিলেন। এ এলাকায় যেতে হলে শাহজালাল হলের সামনে দিয়ে যেতে হয়। শাহজালাল হলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সিক্সটি নাইনের। এ সময় সিএফসির কর্মীদের ধাওয়া দেন সিক্সটি নাইনের কর্মীরা। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায়, সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা শাহজালাল ও সিএফসির নেতারা শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া দিচ্ছেন। দুটি হল পাশাপাশি। উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও কাচের বোতল নিক্ষেপ করছেন। নেতা-কর্মীরা আবাসিক হলের কক্ষ ও শৌচাগারের দরজা, খাট রাস্তায় এনে ঢাল (শিল্ড) হিসেবে ব্যবহার করছেন। এভাবে একে অপরের ইটপাটকেল আটকাচ্ছেন। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পারছে না।
এর আগে গতকাল রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এতে উভয় পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গতকাল রাতে চায়ের দোকানে চেয়ারে বসা নিয়ে দুই কর্মীর কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির জেরে এ সংঘর্ষ হয়েছিল। এ ঘটনার রেশ ধরে আজকেও সংঘর্ষ হচ্ছে। এর আগে গতকাল দুপুর ও বুধবার রাতে সিক্সটি নাইন ও বিজয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষ হয়েছিল। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ নেতা–কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চেয়ে সিক্সটি নাইন পক্ষের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি। ঝামেলা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিবেদকের কাছে সময় চান। আর সিএফসির নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফের ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার সাড়ে পাঁচটায় ঘটনাস্থলে প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষে জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমানে কোনো কমিটি নেই। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর কমিটি বাতিল করে কেন্দ্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ১১টি পক্ষে বিভক্ত। এর মধ্যে আ জ ম নাছিরের ৯টি আর বাকি ২টি মহিবুল হাসানের পক্ষ বলে পরিচয় দেন।