বরগুনায় ১৪৪ ধারা জারি

শহরের বাইরে জেলা ছাত্রলীগের সমাবেশ, ‘পদবঞ্চিতরা’ দলীয় কার্যালয়ে

বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে গতকাল পৌর শহরের বাইরে সমাবেশ করা হয়। রোববার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ক্রোক স্লুইস এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে বরগুনা পৌর শহরে ১৪৪ ধারা জারির পর শহরের বাইরে সমাবেশ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। ‘পদবঞ্চিত’ হিসেবে পরিচিত সংগঠনের অপর পক্ষটি দলীয় কার্যালয়ে পৃথক দোয়া অনুষ্ঠান করেছে।

পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও আহত ব্যক্তিদের সুস্বাস্থ্য কামনায় বরগুনা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমানের নেতৃত্বে আজ রোববার বরগুনা সরকারি কলেজ মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এদিকে নতুন কমিটিতে সভাপতি ‘পদবঞ্চিত’ (বর্তমান কমিটির সহসভাপতি) মো. সবুজ মোল্লা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজ আরিয়ানের নেতৃত্বে একই স্থানে একই কর্মসূচি দেওয়া হয়। বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন আজ দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা বরগুনা সরকারি কলেজ ও পৌর শহর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

বরগুনা পৌর শহরে দলীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের ‘পদবঞ্চিত’ অংশের নেতা–কর্মীদের দোয়া ও স্মরণসভা

এমন অবস্থায় জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শহরের উপকণ্ঠে ক্রোক স্লুইস এলাকায় সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী অংশ নেন। এখানে স্থাপিত শহীদদের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সমাবেশে বক্তৃতা দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান।

সমাবেশে রেজাউল করিম ও তৌশিকুর রহমান বলেন, একুশে আগস্টের নৃশংস হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে তাঁরা সমাবেশ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু তথাকথিত ছাত্রলীগের কতিপয় ব্যক্তি সেই কর্মসূচিকে বানচাল করতে পাল্টা কর্মসূচি দেন। তাঁরা বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস হামলার নিন্দা জানাতে ও নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করতে যাঁরা বাধা দেন, তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হতে পারেন না। তাঁরা সুযোগসন্ধানী, দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে তাঁরা মাঠে নেমেছেন। বরগুনার শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে আজ অশান্ত করে তুলেছেন।

এদিকে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের ‘পদবঞ্চিত’ অংশটি বিকেল পাঁচটার দিকে শহরের শের–ই–বাংলা সড়কের (ফার্মেসি পট্টি) জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মিলাদের আয়োজন করে। এখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইদুল ইসলাম, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সবুজ মোল্লা, অলিউর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাজিব দেবনাথসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বরগুনা সদর থানার পরিদর্শক (ওসি) আলী আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসন কার্যালয় আজ দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা বরগুনা সরকারি কলেজ ও পৌর শহর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সমাবেশের পর বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

গত ২৪ জুলাই রাতে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হয়েছে।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে শহরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নতুন কমিটির নেতা–কর্মীরা। পরে শোক মিছিল নিয়ে শহরে ফেরার পথে তাঁদের লক্ষ্য করে পদবঞ্চিত পক্ষটি জেলা শিল্পকলা একাডেমির দোতলা থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে একটি পক্ষকে থামাতে সেখানে পুলিশ বেধড়ক লাটিপেটা করে।