শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া মাসব্যাপী মেলার আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই মাঠ থেকে এখনো মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়নি। মাঠে রয়ে গেছে অসংখ্য গর্ত। এ পরিস্থিতিতে খেলার মাঠটি রক্ষা ও সংস্কারের দাবিতে স্থানীয় একটি সংগঠন মানববন্ধন করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শরীয়তপুর-মাদারীপুর সড়কে জেলা স্টেডিয়ামের সামনে প্রাণের শরীয়তপুর নামের ওই সংগঠন মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অংশ নেন। তাঁরা দ্রুততম সময়ে মাঠ সংস্কার করে স্টেডিয়ামে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলা শহরের ধানুকা এলাকায় ১৯৭৮ সালে ৬ একর জমির ওপর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ জেলা স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। ১২ হাজার আসনবিশিষ্ট ওই স্টেডিয়ামে সারা বছরজুড়ে ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানা ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৬ ও অনূর্ধ্ব ১৮ খেলোয়ারদের জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন চলে।
বঙ্গবন্ধু টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য গত জুনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্ষা মৌসুম, ঈদুল আজহা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ওই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেনি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৩২টি দল নিয়ে ৫৬টি ম্যাচের আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু স্টেডিয়াম মেলার জন্য ভাড়া দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এখন আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। স্টেডিয়াম মেলার জন্য ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটির সদস্যেরা। কোনো সভা করে ক্রীড়া সংস্থার কমিটির মতামতও নেওয়া হয়নি। ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ একক সিদ্ধান্তে মণিপুরি তাঁতশিল্প জামদানি ও বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে স্টেডিয়ামটি দুই মাসের জন্য ভাড়া দিয়েছেন ও মেলা বসানোর অনুমতি দিয়েছেন।
খেলার মাঠ নষ্ট করে বিভিন্ন স্থাপনা বসানোর কারণে শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্তরে সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সমালোচনার মুখে গতকাল বুধবার মেলা বন্ধ হওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহিম।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মেলার আয়োজন করতে মাঠের বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে বাঁশ-খুঁটি বসিয়ে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। ক্রিকেট খেলার দুটি পিচের পাশে ইট ও লোহা দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা বসানো হয়েছে। অনুশীলনের দুটি ক্রিকেট পিচের ওপর দোকান বসানো হয়েছে।
মেলার জন্য বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনার কারণে মাঠটি খোঁড়াখুঁড়ি করে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। সমালোচনার মুখে মেলা বন্ধ করা হলেও স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় মাঠটি সংস্কারের দাবিতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রাণের শরীয়তপুরের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের কর্মীরা শরীয়তপুর-মাদারীপুর সড়কে জেলা স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়ান। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলে। এই কর্মসূচিতে ‘খেলার মাঠে মেলা কেন?’, ‘খেলার মাঠ উপযুক্ত নয় কেন?’, ‘খেলার মাঠের ক্ষত সারাবে কে?’, ‘খেলার মাঠ সংস্কার করবে কে, জানতে চাই’,—এমন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও ফেস্টুন নিয়ে খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা আগামী সাত দিনের মধ্যে মাঠ সংস্কার করা না হলে পুনরায় কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন।
প্রাণের শরীয়তপুর নামের সংগঠনের সমন্বয়ক রিয়াদ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলার আয়োজন বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠের যে ক্ষতি হলো, তা কে দেখবে? মাঠ সংস্কারের টাকা কোথা থেকে আসবে। জেলা প্রশাসক যাতে সরকারি বরাদ্দ দিয়ে মাঠ সংস্কার না করেন, আমরা সেই দাবি জানাই। কারণ, তিনি এককভাবে মেলার জন্য স্টেডিয়াম ভাড়া দিয়েছিলেন। সংস্কারের দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে মাঠ সংস্কার করা না হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
শরীয়তপুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শাওন ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পড়ালেখার অবসরে বন্ধুরা মিলে স্টেডিয়ামে খেলাধুলা করি। বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ নিই, অনুশীলন করি। এভাবে মেলার জন্য মাঠটি নষ্ট করবে, তা ভাবতেও পারিনি। আমরা চাই, দ্রুত মাঠ সংস্কার করে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।’
শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, মাঠের ক্ষতি হয়েছে, তা সংস্কার করা হবে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। শিগগিরই মাঠ উঁচু করার জন্য মাটি ফেলার কাজ শুরু হবে। তখন মাঠটি সংস্কার হয়ে যাবে।
বিষয়টি জানতে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারাও মন্তব্য করতে রাজি হননি।