বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার। এদিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম এবং প্রয়াত মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কামরুল আহসান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আজ দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের সঙ্গে দলের নেতা-কর্মী ও কামরুল আহসানের সঙ্গে তাঁর বেশ কয়েকজন সমর্থক ছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত হয়নি। আমরা দেখেছি, কোনো কোনো প্রার্থী প্রতীক পাওয়ার আগেই প্রতীকসহ লিফলেট বিতরণ করছেন, যেটা নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। আমি যেভাবে সাড়া পাচ্ছি, তাতে এবার ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য ভোটাররা আমাদের জয়ী করবেন।’
সৈয়দ ফয়জুল করিম আরও বলেন, ‘ফলাফল পাওয়ার আগপর্যন্ত আমরা কোনো অবস্থাতেই শঙ্কামুক্ত নই। আমরা চেষ্টা করব নির্বাচনে সব ভোটারকে উপস্থিত করতে, আমাদের প্রতীকে ভোট দেওয়াতে। বাকিটা সরকার কী করে, না করে, সেটাও দেখার বিষয়। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। আমরা একটি স্বচ্ছ, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষে বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পেরেছি। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি।’
এ বিষয়ে কামরুল আহসান বলেন, ‘১৫ বছরে দেখেছি, এ সরকারের অধীন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপনির্বাচন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচন—কোনোটাই সুষ্ঠু হয়নি। এখানে ইলেকশন ফিক্সিং হয়ে থাকে। সরকারি দল চায় না তাদের শরিক দল ছাড়া কেউ নির্বাচনে অংশ নিক। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে মোটেও আশাবাদী নই।’
কামরুল আহসান আরও বলেন, ‘এই সরকারের অধীন কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটা বহির্বিশ্বের মানুষকে দেখানোর জন্য এবং সারা দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য আমি নির্বাচনে এসেছি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। কারণ, তারা দিনের ভোট রাতে করে, কারচুপি করে, ফলাফল পরিবর্তন করে।’
আপনাদের দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার পরও আপনি প্রার্থী হলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন, ‘জনসমক্ষে আমি প্রমাণ করতে চাই, বিগত ১৫ বছরে আপনারা যা দেখেছেন, শুনেছেন—বাস্তবেই এটা সত্য, এই সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। আমি প্রতিবাদস্বরূপ এই নির্বাচনে এসেছি।’
নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়ায় তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে কামরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিলে আমার বিরুদ্ধে দুদকের চিঠি আসত না, আমাকে হয়রানি করা হতো না। আমি মনোনয়ন সাবমিট করব, এটা একটি মহল চায়নি। আমি মনে করি, দু–এক দিনের মধ্যে আমার নামে পুনরায় কোনো অভিযোগ আসবে।’
কামরুল আহসান আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমার বিএনপিতে কোনো পদ-পদবি নেই, তবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় ছাত্রদল শাখা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। আর এ জন্য আমার নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি নির্বাচনে এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, জাপা, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি ছাড়াও ৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া ৩০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের অনুকূলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১৪৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলের ১০টি পদের অনুকূলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪২ জন।
আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। ১৬ মে ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১৮ মে মনোনয়ন বাছাই, ১৯ থেকে ২১ মে বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের, ২২ থেকে ২৪ মে আপিল নিষ্পত্তি, ২৫ মে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে।