রাজশাহীর তানোর উপজেলার উঁচাডাঙা গ্রামের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর জেলার মধ্যে সবচেয়ে নিচে। এই এলাকার বাসিন্দারা সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি তুলে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন। তবে গত কয়েক দিনের অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো পানিই তুলতে পারছেন না তাঁরা। এর ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামে সব মিলিয়ে ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না।
আনসার আলী নামের উঁচাডাঙা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, আগে অল্প লোডশেডিং হতো। এখন এটা অসহনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় গরমের কষ্টের পাশাপাশি পানির কষ্টও হচ্ছে।
আনসার আলীর কথার সত্যতা মিলল রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) রমেন চন্দ্র রায়ের কথায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ–ঘাটতি আছে। যা পাওয়া যাচ্ছে, আমরা তা–ই দিচ্ছি।’
রাজশাহীতে একদিকে অতিরিক্ত লোডশেডিং, অন্যদিকে অব্যাহত দাবদাহ—এই দুইয়ে মিলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। রাজশাহীতে গতকাল রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবার ছিল ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সোমবার সকাল নয়টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমলেও ভ্যাপসা গরম কমেনি। কারণ, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি। এই অব্যাহত দাবদাহের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে।
রাজশাহীতে গ্রামে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এবং মহানগর ও উপজেলা শহরে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। গ্রাহক পর্যায়ে নেসকোর বিদ্যুতের চাহিদা ৯০ থেকে ১১৫ মেগাওয়াট। তাপমাত্রার সঙ্গে চাহিদা ওঠানামা করে। বর্তমানে গরমের কারণে ঘাটতি হয়ে যাচ্ছে ২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। এই ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে লোডশেডিং দিয়ে। আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রামাঞ্চলে দিনের বেলায় ৪৫-৫০ মেগাওয়াট আর রাতের বেলায় ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। পল্লী বিদ্যুতে ঘাটতি আছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। সেই মোতাবেক শহরের চেয়ে গ্রামে দ্বিগুণের বেশি লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
বাঘা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত শনিবার ভবনের ছাদে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করাচ্ছিলেন শ্রমিক দিয়ে। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তাঁকে কাজ শেষ করতে হয়েছে রাত নয়টার দিকে। আজও একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে গেছে।
পুঠিয়ার মাহাবুব হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ পাওয়াই যাচ্ছে না। এই গরমে দিনে–রাতে সমানতালে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। চারঘাটের কালুহাটি পাদুকা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় জুতা তৈরিতে সমস্যা হচ্ছে।
গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর গ্রামের আহাদ আলী অটোরিকশা চালান। রাতের বেলায় লোডশেডিং হওয়ায় তিনি অটোরিকশা ঠিকমতো চার্জ করতে পারছেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সকালে, বিকেলে, সন্ধ্যায়, রাতে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একবার গেলে অন্তত এক-দুই ঘণ্টা পর আসে। এতে অটোরিকশা চার্জ করতে পারছেন না তিনি। এ ছাড়া রাতে গরমের মধ্যে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না।
এদিকে রাজশাহী শহরেও দিন–রাত মিলিয়ে এলাকাভেদে দুই থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। আগের দিনগুলোর তুলনায় লোডশেডিং বেড়েছে। নগরের মীরেরচক এলাকায় থাকেন রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মহুয়া জান্নাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাতের দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ঘুম হচ্ছে না। এতে শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একই এলাকার বাসিন্দা জিন্নাত আরা বলেন, বিদ্যুৎ মাঝেমধ্যে থাকে বলা চলে। নগরের ভদ্রা এলাকার বাসিন্দা মো. তুহিন বলেন, তাঁর এলাকায় কয়েক দিন আগেও বিদ্যুৎ যেত না। এখন প্রতিদিনই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একবার গেলে তা এক ঘণ্টার আগে আসে না।
নেসকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, রাজশাহী নগরে বিদ্যুতের ঘাটতি আছে। এ কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গেলে হয়তো এই ঘাটতি থাকবে না।