সম্মেলনের এক বছরের মাথায় সিলেট জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে এই কমিটি অনুমোদিত হয়। এতে সব মিলিয়ে বিভিন্ন পদে ১৫১ জনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন আরও ৯১ জন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত বছরের ২৯ মার্চ সম্মেলন করে সরাসরি ভোটে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচন করেছিলেন কাউন্সিলরা। গতকাল কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় দেরি হওয়ার বিষয়ে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, গত জুন মাসে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিপর্যস্ত ছিল। এ সময়টাতে জেলা বিএনপির উদ্যোগে ও উপজেলা বিএনপির সহযোগিতায় জেলাজুড়ে ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এরপর বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজনে জেলা বিএনপির নেতাদের ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে সংগঠন মনোযোগ দিতে পারেনি।
এর আগে গত বছরের ২৯ মার্চ সিলেট নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলনে কাউন্সিলদের ভোটের মাধ্যমে তিন শীর্ষ পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর উদ্বোধন করেন। পরে বেলা দেড়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হয়। কাউন্সিলে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৮১৮ জন। এর মধ্যে ভোট পড়ে ১ হাজার ৭২৬টি। সম্মেলনে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতি, এমরান আহমদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক ও মো. শামীম আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বিএনপির ঘোষিত কমিটি ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি ছাড়াও ৯১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী কমিটিতে ২০ জন সহসভাপতি, ১২ জন যুগ্ম সম্পাদক এবং ৫ জন সাংগঠনিক সম্পাদক রাখা হয়েছে। কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ ছাড়াও ৩১ জন সম্পাদকীয় পদে ঠাঁই পেয়েছেন। অন্যরা সহসম্পাদক ও সদস্য পদে রয়েছেন। ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটিতে ৭ জন নারী এবং ১ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ঠাঁই পেয়েছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে ‘নিখোঁজ’ হন। প্রায় ১১ বছর ধরে তিনি ‘নিখোঁজ’ থাকলেও গতকাল ঘোষিত জেলা কমিটিতে তাঁকে ১ নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
‘নিখোঁজ’ নেতাকে কমিটিতে রাখা প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো বিশ্বাস করি, ইলিয়াস আলী জীবিত আছেন। মূলত সরকার তাঁকে ‘গুম’ করে রেখেছে। একসময় তিনি জেলা বিএনপির সভাপতিও ছিলেন। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই সিলেট অঞ্চলের জনপ্রিয় এ নেতাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।’
কমিটি ঘেঁটে দেখা গেছে, জেলা বিএনপির দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ১১ নম্বর সদস্য হিসেবে আছেন ইলিয়াসের ছেলে আবরার ইলিয়াস। অন্যদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কমিটিতে তৃতীয় সদস্য হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন। মহানগর বিএনপির এই সাবেক সভাপতি বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও হিসেবে আছেন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর যোগাযোগ করলে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে যে কর্মসূচি পালন করছে, এ কমিটি গঠনের ফলে সে আন্দোলন-সংগ্রাম আরও বেগবান হবে বলে মনে করছি। সামনে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে এ কমিটির নেতৃত্বে দলের কর্মী-সমর্থকেরা নিশ্চয়ই রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।