সড়কের কাজ বন্ধ, ধুলায় ভোগান্তি 

সমস্যার সমাধান চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সুরাহা পাননি ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। 

ইটের খোয়া ফেলার পর সড়কের কাজ বন্ধ। গত শনিবার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার দেবীগঞ্জ-ভাউলাগঞ্জ সড়কের সবুজপাড়া এলাকায়

সড়কের দুই পাশের গাছের পাতাগুলোর রং লালচে হয়ে গেছে। বাড়ি-ঘরের ছাদ, টিনের চালা, সীমানাপ্রাচীর আর টিনের বেড়াগুলোতেও বসেছে লালচে ধুলোর স্তর। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয় না শিশুদের। সামনে দিয়ে একটি গাড়ি ছুটে গেলেই লালচে ধুলো থেকে বাঁচতে নাক-মুখ চেপে ধরতে হয় পথচারীদের।

এই চিত্র পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার দেবীগঞ্জ-ভাউলাগঞ্জ সড়কের সবুজপাড়া এলাকার। ইটের খোয়া ফেলে সড়ক নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তিন মাস ধরে সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই সমস্যার সমাধান চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সুরাহা পাননি ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দেবীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর দেবীগঞ্জ বাজার থেকে দেবীগঞ্জ-ভাউলাগঞ্জ সড়কের ১ দশমিক ৩৮৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাজটি পায় মেসার্স রূপালী এন্টারপ্রাইজ। এক বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি।

কাজের সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দেবীগঞ্জ পৌর শহরের পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় থেকে সবুজপাড়া মোড় পর্যন্ত ২০০ মিটারের বেশি সড়কে ইটের খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। ব্যস্ততম এই সড়কে গাড়ি চলাচল করায় ইটের খোয়ার ধুলা উড়ছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সবুজপাড়া এলাকায় সড়কে গিয়ে দেখা যায়, একটার পর একটা চলছে যানবাহন। অনবরত উড়ছে লালচে ধুলা। ওই সড়ক দিয়ে স্কুল-কলেজ থেকে ফেরা শিক্ষার্থীরা নাক-মুখ চেপে ধরে চলাচল করছেন। সড়কের দুই পাশে বাসিন্দাদের কেউ কেউ ধুলা থেকে বাঁচতে পানি ছিটাচ্ছেন। সড়কের পাশে থাকা কিছু দোকানের অর্ধেক শাটার খুলে চালানো হচ্ছে দোকান। ঘরের ভেতরে ধুলা যাতে যেতে না পারে, সে জন্য জানালা বন্ধ করে রেখেছেন। 

প্রতিদিন ওই সড়ক দিয়ে উপজেলা শহরে যান অন্তুত তিনটি ইউনিয়নের মানুষ। পৌরসভার সবুজপাড়া এলাকার কয়েক শ বসতবাড়ির মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। 

সবুজপাড়া এলাকার দোকানি মো. মামুন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ইটের খোয়া ফেলে রাখায় আমরা চরম দুর্ভোগে পড়েছি। একটা গাড়ি গেলেই ধুলায় টেকা যায় না। দোকানের অর্ধেক শাটার খুলে বেচাকেনা করতে হয়। বাড়িতেও ধুলার জন্য থাকা যায় না। প্রতিদিন কাপড় ময়লা হয়ে যায়। বাচ্চাদের অনেকের শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হচ্ছে। ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ আহম্মেদ সরকার বলেন, ‘তিন মাসের বেশি সময় ধরে কাজ না করে এভাবে খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। ইটের খোয়াগুলোও নিম্নমানের। সহজেই তা গুঁড়া হয়ে ধুলায় পরিণত হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও পানি ছিটিয়ে দেয় না। ধুলার কারণে বাড়ি থেকে বাচ্চাদের বের করতে পারি না। আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পৌরসভার মেয়র, ইউএনও, এলজিইডিসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি।’ 

ধুলার কারণে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজন

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজটি প্রায় শেষ দিকে এসে গেছি। এর মধ্যে আমার অসুস্থতাসহ কিছু সমস্যার কারণে কিছু কাজ বাকি আছে। কাজটি যে ব্যক্তি দেখাশোনা করেন, তিনি ভারতে যাওয়ায় কাজটা কিছুটা পিছিয়েছে। তবে ধুলা কমানোর জন্য সেখানে পানি দেওয়া হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই কাজ শেষ করে ফেলব।’

দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহরিয়ার ইসলাম শাকিল মুঠোফোনে বলেন, ওই সড়কের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। তবে সবুজপাড়া এলাকায় খোয়া ফেলে রাখায় ওই এলাকার গাছপালা-বাড়িঘর বিবর্ণ হয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারকে কারণ দর্শানোর তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁর চুক্তি বাতিল করার জন্য বারবার নোটিশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার ফোন ধরেন না।