২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহল্লার মাফিজুল ইসলাম (২৫)। এত দিনে ছেলে হারানোর শোক অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন বাবা-মা। কিন্তু ২ বছর ২ মাস পর এসে পরিবারটি জানতে পারল মাফিজুল খুন হয়েছেন।
মাফিজুলের পুঁতে রাখা লাশের সন্ধান মিলেছে গুরুদাসপুর শহরের চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকের পাশে। শনিবার দিনভর ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন তথ্যটি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে জানান, লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা (৫৫) তাঁর মেয়ে তানজিলা খাতুন (২৮), জামাতা আল হাবিব সরকার (৩৫) ও তাঁদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুলিশ। এর আগে শুক্রবার রাতে মাফিজুলের মা মাইনুর বেগম গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ওই ৪ জনসহ ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
র্যাব-৫-এর নাটোর ক্যাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাফিজুল ইসলাম ও তানজিলা খাতুন খলিফাপাড়া মহল্লার একটি বিস্কুট কারখানায় চাকরি করতেন। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে তানজিলা-আল হাবিব দম্পতির মাঝে কলহ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তানজিলার বাবার কাছে অভিযোগ করেন জামাতা। তানজিলার বাবা কৌশলে মাফিজুলকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল।
গভীর রাতে সেখান থেকে আবু তাহের খলিফা তাঁর কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতর নিয়ে যান। সেখানে হাত-পা বেঁধে ও মুখে স্কচটেপ দিয়ে আসামিরা মাফিজুল ইসলামকে হত্যা করেন। পরে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখেন। আর ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় মাফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় ২০২২ সালের ৭ মে একটি জিডি জিডি করেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর তানজিলা-হাবিব দম্পতির মধ্যে কলহ বেড়ে যায়। এ কারণে ২০২২ সালের মে মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করেন তানজিলা। এ মামলায় কারাগারে আছেন আল হাবিব। কারাগারে গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়া মহল্লার জাকির মুন্সির (৪০) সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে আল হাবিবের। আলাপচারিতায় হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আল হাবিব জানান জাকির মুন্সিকে। জাকির মুন্সি জামিনে মুক্তি পেয়ে মাফিজুল ইসলামের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলেন। বিষয়টি নিয়ে থানা-পুলিশের আশ্রয় নেয় পরিবার। থানা-পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন ও তাঁর বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তাঁরা।
পরে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। র্যাব-৫, নাটোর ক্যাম্প গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আসামি আশরাফুল ইসলামকে আজ শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জের গোলচত্বর এলাকা থেকে আটক করে।