১০ সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর দাবি, অন্যথায় আন্দোলন

কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনের পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মালিকদের ১০টি সংগঠনের নেতারা এ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন
ছবি: প্রথম আলো

নাব্যতাসংকটের অজুহাতে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পর্যটকদের ভ্রমণসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন খাতের অন্তত পাঁচ লাখ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তাই দ্রুত এই নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিনের পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও মালিকদের ১০টি সংগঠনের নেতারা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের একটি হোটেলে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো—ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক), কক্সবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্টহাউস মালিক সমিতি, সিক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব), কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল–রিসোর্ট মালিক সমিতি, কক্সবাজার বাস-মিনিবাস মালিক গ্রুপ, সেন্ট মার্টিন আবাসিক হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি, সেন্ট মার্টিন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, সেন্ট মার্টিন বোট মালিক সমিতি, সেন্ট মার্টিন বাজার দোকান মালিক সমিতি ও ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নাইমুল হক চৌধুরী। সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন স্কোয়াবের সহসভাপতি আবু নোমান, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডালিম, সেন্ট মার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কয়েক বছর ধরে সেন্ট মার্টিন নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পর্যটক ভ্রমণের ফলে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, এমন প্রচারণাও চলছে। কিন্তু মানুষকে বাদ দিয়ে পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন। পর্যটন ব্যবসার স্বার্থে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষা করতে তারা বদ্ধ পরিকর। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন ও ইউএনডিপির সহায়তায় টুয়াক দ্বীপ প্লাস্টিকমুক্ত করার বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার নামে একটি মহল সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে সেন্ট মার্টিন পর্যটক ভ্রমণের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। ওই পরিসংখ্যানে দাবি করা হয়, ২০১৯ সালে নভেম্বর থেকে মার্চ পযন্ত পাঁচ মাসে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ জন। অর্থাৎ ওই বছর ১৫১ দিনের পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬৩ জন মানুষ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছেন। সেন্ট মার্টিনের জনসংখ্যা ১০ হাজার। এ অবস্থায় দৈনিক এক হাজার পর্যটক ভ্রমণে গেলে কী এমন সমস্যা হতো, সেই প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নাইমুল হক বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে এই নৌপথে ১০টির বেশি জাহাজ চলাচল করছে। নাফ নদীতে নাব্যতা সৃষ্টির অজুহাতে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হলেও মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ আসা–যাওয়া করছে। নাব্যতাসংকট থাকলে মালবোঝাই জাহাজ চলাচল করতে পারত না। দীর্ঘদিন ধরে এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় ১০টি সংগঠনের আওতাধীন পাঁচ লাখ মানুষের জীবন–জীবিকা হুমকির মুখে। বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নৌপথে জাহাজ চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চান তিনি।

দ্রুত জাহাজ চালু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও সেন্ট মার্টিনে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ করা যায়নি। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের বোট ও স্পিডবোটে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত করছেন। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই পর্যটকের নিরাপদ যাতায়াত এবং সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের জীবন–জীবিকা নির্বাহে অতিদ্রুত টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু করা দরকার। যদি জাহাজ চালু না হয়, তাহলে পর্যটনসেবার সঙ্গে জড়িত সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে তারা।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, নাফ নদীতে নাব্যতা সৃষ্টির কারণে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পযটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই নৌপথে জাহাজ চালুর বিষয়ে তিনি কোনো সরকারি নির্দেশনা পাননি।

প্রসঙ্গত, নাফ নদীতে ডুবোচর ও নাব্যতাসংকটের কথা বলে চলতি মৌসুমের শুরু থেকে (১ নভেম্বর) কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। অথচ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে একাধিক বিলাসবহুল জাহাজে চড়ে হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যাচ্ছেন। এতে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের পরিবহনের বিষয়টি ঢাকাকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে বন্ধ থাকা জাহাজগুলোর একাধিক মালিক।