ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার দুই ব্যক্তি বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে থানায় দুটি মামলা করেন। এই দুই মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিনসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ১৩৪ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
আশুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ স ম আতিকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একটি মামলার বাদী হয়েছেন উপজেলার বাহাদুরপুর মৈশার গ্রামের বাসিন্দা হাসান মিয়া। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়াকে প্রধান আসামি করে ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেছেন। এই মামলায় আশুগঞ্জ গোলচত্বর, উপজেলার চরচারতলা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে।
আরেকটি মামলার বাদী হয়েছেন উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়নের বাসিন্দা রমজান আলী। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এই মামলায় উপজেলার সোনারামপুর, উজান-ভাটি হোটেলসংলগ্ন বাদশা বাড়ির মোড়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে। উভয় মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
এই দুই মামলার এজাহারে থাকা উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঈন উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছফিউল্লাহ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল সিকাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহিন সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মুছা মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রিফাত সিকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন সিকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য আবু রিজভি, ইলিয়াস মিয়া, বাবুল মিয়া ও কাউসার আলম, যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন খন্দকার, তালশহর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলেমান, তালশহর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোলায়মান মিয়া, দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল মিয়া, তাঁর আপন ভাই রোমান মিয়া প্রমুখ।
মামলা দুটির এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ৪ আগস্ট আশুগঞ্জ গোলচত্বর, উপজেলার চরচারতলা, সোনারামপুর, উজান-ভাটি হোটেলসংলগ্ন বাদশা বাড়ির মোড়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে এগোনোর পথে আসামিরা ককটেল, বোমা, পিস্তল, দা, লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হন। তাঁরা ছাত্র–জনতার ওপর ককটেল ছুড়ে মারেন। বিকট শব্দে ঘটনাস্থল প্রকম্পিত হয় এবং ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এ ছাড়া আসামিরা পিস্তল দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে মামলার বাদী হাসানের খালাতো ভাই ফেরদৌস মিয়ার বাঁ হাতের কবজির ওপর দুটি গুলি লাগে। আসামিরা একপর্যায়ে পেট্রল দিয়ে মামলার সাক্ষী ও পথচারীদের ৪০টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেন।
দুটি মামলাতেই ফেরদৌস মিয়া নামের একজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। ফেরদৌস মামলা দুটির বাদীদের খালাতো ভাই বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরদৌসের বাঁ হাতের কবজির ওপর দুটি গুলি লেগেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।