কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে যমুনা নদীতে তীব্র নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছে। এতে গত শুক্রবার রাত ৯টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। আজ রোববার বেলা ১১টায় ধারণক্ষমতার চেয়ে কম ট্রাক নিয়ে একটি ফেরি পরীক্ষামূলকভাবে কাজীরহাট থেকে আরিচার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এদিকে পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকে আছে দুই শতাধিক ট্রাক। ট্রাকের দীর্ঘ সারি তিন কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। মহাসড়কে এতগুলো ট্রাক আটকে থাকায় ট্রাকশ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
অক্টোবরের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে এই নৌপথের দুটি ফেরি বিকল হয়ে যাওয়ায় ফেরি–সংকট দেখা দিয়েছিল। গত ১৫ অক্টোবর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ স্বাভাবিকভাবে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন পারাপার না হতে পারায় কাজীরহাট ফেরিঘাট–সংলগ্ন মহাসড়কে দু-তিন দিন আটকে থাকে ট্রাকগুলো। তখনো প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে দেখা দেয় ট্রাকের দীর্ঘ সারি। পরে একটি ফেরি মেরামত হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা ও যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর এই নৌপথে নাব্যতা–সংকট দেখা দিলেও এবার তা দেখা দিয়েছে কিছুটা আগেভাগেই ও তীব্র আকারে। দুই সপ্তাহ ধরেই এই নৌপথে ডুবোচরে ফেরি আটকে যাচ্ছিল। ফেরিগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলছিল ধারণক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যানবাহন নিয়ে। এর মধ্যে শুক্রবার বিকেলে ‘খান জাহান আলী’ নামের একটি ফেরি আরিচা থেকে কাজীরহাট আসার পথে ডুবোচরে আটকে যায়। পরে সেটিকে কোনোমতে উদ্ধার করে কাজীরহাটে নিয়ে আসা হয়। নাব্যতা–সংকট প্রকট আকারে দেখা দিলে ওই দিন রাত ৯টা থেকে এই নৌপথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে কাজীরহাট ও আরিচা ফেরিঘাটের দুই পাড়ে পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়।
কাজীরহাট ফেরিঘাট সূত্রে জানা যায়, এই নৌপথ শুরু থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছিল প্রয়োজনের চেয়ে কমসংখ্যক ফেরি দিয়ে। অথচ সহজে ও অল্প খরচে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের সুবিধার কারণে এখানে রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যাত্রী চলাচলের ব্যাপক চাপ। এই নৌপথে অন্তত সাতটি ফেরির প্রয়োজন থাকলেও এটি পরিচালনা করা হচ্ছিল পাঁচটি ফেরি দিয়ে। এখন একটি ফেরি বিকল থাকায় নৌপথটি পরিচালনা করা হচ্ছে চারটি ফেরি দিয়ে।
গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে কাজীরহাট ফেরিঘাটে দেখা যায়, ফেরিঘাটের তিনমাথা মোড় থেকে বাঁধেরহাটের দিকে মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে সারি বেঁধে পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। পারাপারের অপেক্ষায় থাকা এসব ট্রাকের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই থেকে তিন দিন আগে তাঁরা আরিচা পার হওয়ার জন্য এসে আটকে আছেন।
ট্রাকচালক আশরাফ আলী বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে সোনামসজিদ থেকে পাথর নিয়ে ঘাটে এসেছি। এরপর দুই দিন ধইরা ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় আছি। আমার সামনে পার হওয়ার অপেক্ষায় এখনো প্রায় এক শ ট্রাক আছে। এ অবস্থায় কবে পার হতে পারব, কিছুই বুঝতেছি না।’
আরেক ট্রাকচালক মনির হোসেন বলেন, ‘আশপাশে কোথাও খাওয়ার জায়গা নেই, টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। রাস্তার ওপরে মানবেতর অবস্থায় আমরা দু-তিন দিন ধইরা এভাবে রইছি। সঙ্গে টাকাপয়সা যা ছিল, তা-ও শেষ হওয়ার পথে। আমাগরে কষ্ট কিডা দেখবে?’
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে ড্রেজিং অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি, শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার পর আজ বেলা ১১টার দিকে শাহ আলী নামের একটি ফেরিকে ১০টি ট্রাক দিয়ে আরিচায় পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো হয়েছে। এটি কীভাবে পৌঁছায় দেখার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’