বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি, শিক্ষানবিশ) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আবারও স্থগিত করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর এই প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণরত ৪০তম ক্যাডেট উপপরিদর্শকদের (এসআই) সমাপনী কুচকাওয়াজও স্থগিত করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর তাঁদের সমাপনী কুচকাওয়াজ হওয়ার কথা ছিল।
গতকাল সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরের আলাদা দুটি বিজ্ঞপ্তিতে এএসপি ও এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। কেন কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হলো, সে ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর কিছু জানায়নি। যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা চিঠিতে সই করেছেন, তাঁরাও এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি।
পুলিশ একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের গত বছরের ২০ অক্টোবর এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে এ বছরের ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ জন্য দেড় হাজারের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে আগের রাতে হঠাৎ করেই কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর আবারও ২৪ নভেম্বর এই অনুষ্ঠানের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল। এবারও তা স্থগিত করা হলো।
গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মহিউল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের ৩ জন, ৪০তম ব্যাচের ৬৩ জনসহ মোট ৬৬ জন শিক্ষানবিশ এএসপি এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সমাপনী কুচকাওয়াজ অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের তারিখ ও সময় পরে জানানো হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগপর্যন্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মহিউল ইসলাম আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় আছেন। দ্বিতীয় দফায় এই সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারণ যে বলতে পারব না।’ আবার হবে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশা তো করি।’
এদিকে গত বছরের ৫ নভেম্বর ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের ৮২৩ জন এসআইয়ের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল। ৪ নভেম্বর তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগে গত ২১ অক্টোবর প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন, ৪ নভেম্বর ৫৮ জন এবং সবশেষ গতকাল সোমবার ৩ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এই ব্যাচের ৩১৩ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নাশতা না খেয়ে প্রশিক্ষণ মাঠে হইচই করা এবং প্রশিক্ষণ চলাকালে অমনোযোগী থাকার অভিযোগ আনা হয়; যদিও এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছেন চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা।
এই ব্যাচের যাঁদের চাকরি এখনো আছে, তাঁদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ২৬ নভেম্বর। তবে গতকাল তাঁদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজও স্থগিতের আদেশ হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেহেলা পারভীনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত এই প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হলো। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের তারিখ ও সময় পরে জানানো হবে। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
কেন এই অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে, তা জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেহেলা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হলো, সেটা আমি বলতে পারব না। স্থগিত করা হয়েছে এটা নিশ্চিত।’ পরে আবার কবে হবে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই তারিখটা এখনো ঠিক করা হয়নি।