খুলনার দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ধোপাদী গ্রামের মাঝবিল পাড়ায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে ১৩টি গরু মারা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া উপজেলার কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব, বাজুয়া ও বাণীশান্তা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গরু অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় একধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। গরুর মালিকদের আপাতত বিলে বা তরমুজখেতে গরুকে ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বাড়িতে রেখে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। জনসচেতনতার জন্য এলাকায় মাইকিং করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিতে উপজেলার বিলে পানি জমে গেছে। কিছুদিন আগে তরমুজ উঠেছে। তরমুজ চাষে ব্যবহৃত দানাদার কীটনাশক গলে বিষাক্ত হওয়া পানি খেয়ে অথবা কীটনাশকের অব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল বা প্যাকেট খেয়ে এসব গরু মারা যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন গরুর মালিকেরা।
তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, বৃষ্টির দিনে কচি ঘাসে নাইট্রোজেনের মাত্রা অত্যধিক বেশি থাকে। এসব কাঁচা ঘাসের নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় গরুগুলো মারা যেতে পারে।
স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলার ধোপাদী গ্রামের মাঝবিল পাড়ায় সুনীল মণ্ডলের ৫টি, পরিমল মিস্ত্রীর ৪টিসহ মোট ১৩টি গরু মারা গেছে। এর মধ্যে পাঁচটি বড় গরু ও বাকিগুলো বাছুর। সকাল থেকে বিলে ঘাস ও পানি খেয়ে গরুগুলো আটটা-নয়টার দিকে গোয়ালে ফিরে আসে। ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে সেগুলো মারা যায়। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অশোক কুমার গাইন বলেন, এক ঘণ্টার ব্যবধানে এলাকায় ১৩টি গরু মারা গেছে। আশপাশের ওয়ার্ডেও গরু মারা যাচ্ছে। রিমালের প্রভাবে জমা বিলের পানি জলকপাটের (স্লুইসগেট) মাধ্যমে নিষ্কাশন করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। আর গরুর মালিকেরাও বিলে গরু ছাড়ছেন না। আপাতত বাড়িতে বেঁধে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাবেক পরিচালক সুখেন্দু গায়েনের বাড়ি দাকোপের কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নে। তিনিও বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তরমুজ চাষের জমিতে পানি না শুকানো পর্যন্ত গরু মাঠে ছাড়বেন না। যেখানে পানি ওঠেনি সেখানে গরু বাঁধতে পারেন, তবে বাড়ির নিরাপদ পানি খাওয়াবেন। মনে রাখবেন, আপনারা পর্যাপ্ত ইউরিয়া দিয়ে তরমুজ ফলিয়েছেন। তাই ওই মাঠের কচি ঘাস খেলেই নাইট্রেট পয়জনিং (বিষক্রিয়া) হচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।’
দাকোপ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বঙ্কিম কুমার হালদার প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন পর বৃষ্টি হলে পানি পেয়ে যে ঘাসগুলো দ্রুত বেড়ে ওঠে বা যেসব ঘাস পানিতে ডুবে থাকে, সেই ঘাস খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। মারা যাওয়া গরুগুলোর ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ওই সব এলাকায় সচেতনতার জন্য আজ বিকেল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
তরমুজ চাষে ব্যবহৃত কীটনাশকের প্রভাব আছে কি না, জানতে চাইলে বঙ্কিম কুমার হালদার বলেন, ওই এলাকায় তরমুজ চাষে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তরমুজ চাষে কীটনাশক ব্যবহারের পরোক্ষ প্রভাবও এর পেছনে থাকতে পারে। তাঁরা ওই ঘাসের নমুনা সংগ্রহ করছেন। পরীক্ষার পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।