মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রাস্তার পাশে প্লাস্টিকের ঝুড়িভর্তি (ক্যারেট) নিষিদ্ধ সাকার মাছ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্রীমঙ্গলের পোস্ট অফিস সড়কে এসব মাছ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ মাছই তাজা ছিল। মাছের মালিক খুঁজে না পাওয়ায় মৎস্য কার্যালয়ে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। পরে মৎস্য কার্যালয়ের লোকজন এসে মাছগুলো জব্দ করেন।
পোস্ট অফিস সড়কের পাশের গলিতে কর্তব্যরত নৈশপ্রহরী বিজয় বলেন, গতকাল বিকেলে প্লাস্টিকের ক্যারেটসহ কেউ এখানে মাছগুলো ফেলে গেছেন। রাতে সব দোকান বন্ধ হওয়ার পরই সবার নজরে আসে মাছগুলো। পরে সবাই ভিড় জমান। এসব মাছের নাম সাকার, যা নিষিদ্ধ বলে তাঁরা শুনেছেন।
শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদের সদস্য নুর মোহাম্মদ সাগর প্রথম আলোকে বলেন, রাতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ঝুড়িতে মাছগুলো দেখতে পান। কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন এসব নিষিদ্ধ সাকার মাছ। যেহেতু নিষিদ্ধ মাছ, খাওয়ার উপযোগী নয়। তাই তিনি ফোন করে উপজেলা মৎস্য অফিসে জানান। পরে দিবাগত রাত ১২টার দিকে মৎস্য অফিসের লোকজন এসে মাছগুলো নিয়ে যান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে মৎস্য অফিসের লোকজন পাঠিয়ে মাছগুলো জব্দ করা হয়েছে। এগুলো মাটিচাপা দেওয়া হবে। সাকার মাছ দেশে নিষিদ্ধ। এই মাছ দেশি প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে মাছের বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ মাছ যেকোনো পরিবেশে বাঁচতে পারে ও দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশি প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। মাছটি খাওয়াও যায় না। এই মাছ জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে। এই কারণে সরকার মাছটি নিষিদ্ধ করেছে। এই মাছ চাষ ও বিক্রি করা অপরাধ।
সাকার মাছের ইংরেজি নাম Suckermouth Catfish বা Common Pleco। এই মাছ দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে মৎস্য অধিদপ্তর। তাদের এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, সাকার মাছ আশির দশকে ব্রাজিল থেকে অননুমোদিত বাহারি মাছ হিসেবে প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সাকার মাছ নদী-নালা, খাল-বিল ও চাষের পুকুরে চাষ করা মাছের সঙ্গে ব্যাপকভাবে ধরা পড়ছে, যা দেশি প্রজাতির মাছের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সাকার মাছের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে প্রচারপত্রে আরও বলা হয়েছে, যেকোনো জলজ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশি প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে এই মাছ। দেশি প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সর্বোপরি জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে সাকার মাছ। দেশি প্রজাতির ছোট মাছসহ জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা, ছোট শামুকজাতীয় প্রাণী খেয়ে সাকার মাছ পরিবেশের সহনশীল খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে। জলাশয় পাড়ের ক্ষেত্রবিশেষে পাঁচ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে পাড়ের ক্ষতি করে এবং জলাশয়ের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা কমায়।