মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা
মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা

মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ

শিরোপা নিয়ে যেন দেশে ফিরতে পারি: মাকে ফোনে সাবিনা

পুরো দেশ আজ ঘুম থেকে উঠেছে বিরাট এক স্বপ্ন নিয়ে। স্বপ্নের শেষটা লেখা হবে কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে। শেষ হাসি কে হাসবে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক ঘণ্টা। দিন শেষে আজ ফুটবল মাঠে লেখা হবে নতুন এক ইতিহাস। এই প্রথম নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে দক্ষিণ এশিয়ার এ টুর্নামেন্ট।

যাঁর কাঁধে সওয়ার হয়ে বাংলাদেশের মানুষের আজকের স্বপ্নটা বড় হয়েছে, তিনি সাবিনা খাতুন। সাবিনা খাতুনের নিজের শহর সাতক্ষীরার মানুষও অধীর অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন তাঁদের মেয়ের হাতে শিরোপা দেখার। সাবিনার পরিবারও ‘মেয়েদের জন্য’ দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

সাতক্ষীরা শহরের সবুজবাগ এলাকায় সাবিনাদের বাড়ি। সরু আঁকাবাঁকা এবড়োখেবড়ো পথ ধরে পৌঁছে গেলাম তাঁদের বাড়ি। সাবিনা নেপালে থাকলেও তাঁদের ছোট্ট বৈঠকখানাটা যেন সাবিনারই দখলে। নানা অর্জনের স্মারক আর ছবিতে সাজানো। সেখানে যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দীনের সঙ্গে ছবি স্থান পেয়েছে, তেমনি আছে স্কুলজীবনে যে শিক্ষকের হাত ধরে আজকের সাবিনা হওয়ার পথচলা শুরু,সেই কাজী রাফিয়া খাতুনের সঙ্গে ছবি। আছে সাবিনার ৫০, ১০০ আর ২৫০ গোল করার বাঁধানো স্মারক জার্সি। শোকেস ভরা বিভিন্ন ধরনের অভিনন্দনবার্তার স্মারক।

গতকাল রাতে শেষবার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবিনা। টিম মিটিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করায় আজ আর কথা হয়নি। গত রাতে মা আর বোনের কাছে দোয়া চেয়েছেন, শিরোপাটা যেন এবার দেশে আনতে পারেন। সাবিনার মা মমতাজ বেগম মেয়ের জন্য আর গোটা দলের জন্য দোয়া চেয়েছেন। খেলা শুরুর আগে আবার মায়ের সঙ্গে কথা বলার কথা আছে সাবিনার।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল

সাবিনার বাবা মো. সৈয়দ আলী গাজী ২০২০ সালে মারা গেছেন। পাঁচ বোনের বড় দুই বোন লেবাননে থাকতেন। বাবা গত হওয়ার পর বড় বোন সালমা খাতুন দেশে থেকে গেছেন। তিনিই এখন পরিবারের কর্ত্রী।

সালমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ছোটবেলাটা সংগ্রামের। বোন এখন দেশ-বিদেশে খেলে। সব সময় গোল করে যাচ্ছে। এবারের টুর্নামেন্টে অনেক ভালো করছে। দুটো হ্যাটট্রিক করেছে। অবশ্য পুরো দলই ভালো খেলছে। সবকিছু মিলে খুবই গর্ব হয় ওর জন্য; ওদের জন্য।’

আলাপে আলাপে জানান, তাঁদের পাঁচ বোনের মধ্যে শুধু সেজো বোন শিরিনার বিয়ে হয়েছে। তারপরও তাঁরা সবাই মিলে একসঙ্গে থাকেন। মা সবার আগেই টিভি রুমে এসে বসেন। শিরিনার ছেলে তাঁদের ছোট্ট ভাগনে আদনান তার খালামণির গোলে ভীষণ খুশি হয়। আশপাশের অনেকে খেলা দেখতে আসেন। কথা বলার সময় পাশ থেকে আদনান বলে ওঠে, ‘খালামণি আজ ৭ গোল দেবে।’

ফাইনালের দিন বাবাকে খুব মিস করছেন সাবিনার বোনেরা। পাশাপাশি সাবিনার কোচ ‘আকবর স্যারকে’ মনে পড়ছে তাঁদের। সালমা খাতুন বলেন, ‘সাবিনার যেখানেই খেলা থাকত, বাবা চলে যেতেন। আজ বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন। আর আকবর স্যার তো বাবার স্নেহে সাবিনাকে গড়ে তুলেছেন। আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় সাবিনার সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হতো না। স্যারই এগুলো দেখতেন। স্যারও কয়েক দিন আগে না–ফেরার দেশে চলে গেছেন। আজকের দিনে স্যারের কথাও খুব মনে পড়ছে আমাদের।’

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ ছন্দে আছেন সাবিনা খাতুন (মাঝে)

মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এবার একের পর এক গোল উৎসবে টানা চার ম্যাচ অপরাজিত টিম বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জালে বল জড়াতে পারেনি কোনো দল। বাকি শুধু দেশের মানুষকে শিরোপার আনন্দে ভাসানো।