বগুড়া–৪ ও ৬ উপনির্বাচন

ইসিতে করা আপিল খারিজ, এবার উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন হিরো আলম

উচ্চ আদালতে আপিল করতে আইনজীবীর দপ্তরে কাগজপত্র প্রস্তুত করতে যান হিরো আলম
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে হিরো আলম শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় প্রার্থিতা ফেরতের বিষয়ে তাঁর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেজাউল হোসেন যুক্তি তুলে ধরেন।

আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম

মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় ক্ষুব্ধ হিরো আলম। তিনি আজ রোববারের মধ্যেই উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। মুঠোফোনে হিরো আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরু থেকেই নির্বাচন করা নিয়ে অনেকের মাথাব্যথা হয়েছি। আমার জনপ্রিয়তায় অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত। এ কারণে ষড়যন্ত্র করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলাম। আশা করেছিলাম, ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু ইসিও ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে মাথা নত করে আমার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে এটা অন্যায় করা হয়েছে।’

হিরো আলম অভিযোগ করেন, ‘আমার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন অন্যায় করেছে। অন্যায় করে দুটি আসনেই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজকেই উচ্চ আদালতে যাব।’

মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হাস্যকর উল্লেখ করে হিরো আলম বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বগুড়ার দুটি সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে ন্যূনতম ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর সংগ্রহ করে করে তা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করেছেন। ইসি থেকে ১০ জন ভোটারের স্বাক্ষর যাচাইয়ে পাঠানো হয়। যাচাই শেষে অভিযোগ আনা হয়, কয়েকজন ভোটারের স্বাক্ষরের মিল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া দুজন ভোটারের নাম-ঠিকানা সঠিক নেই বলেও জানানো হয়। অথচ ভোটারদের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর সঠিক আছে। প্রয়োজন হলে ভোটারদের ইসিতে হাজির করার কথাও জানানো হয়েছিল। এ ছাড়া নাম-ঠিকানা সঠিক নেই বলে যে দুজন ভোটারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দুজনের স্বাক্ষরই দাখিল করা হয়নি।

হিরো আলম বলেন, দল করলেই সব মাফ। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে পদে পদে বাধা, পদে পদে হয়রানি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের আইন বাতিল করতে হবে। সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই আইন থাকলে স্বতন্ত্র থেকে কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর দাখিলের আইন ভেঙে নতুন আইন চালু করতে হবে।

হিরো আলম বলেন, ‘প্রার্থিতা ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে আপিল করব। ফিরে না পেলে আর কখনো নির্বাচন করতে যাব না। কারণ, গণতন্ত্রহীন এই দেশে মানুষের ভোটের অধিকার নেই, প্রার্থী হওয়ার অধিকারও হরণ করা হয়েছে। এখন আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি।’

হিরো আলম ক্ষুব্ধ সুরে প্রথম আলোকে বলেন, কাল সোমবার প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। আপিল শুনানির রায়ের কপি নিয়ে তিনি আজকেই উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন। সেখানে রিট করলেও শুনানি হতে সময় লাগবে। তাহলে প্রচার–প্রচারণা চালাবেন কখন, আর নির্বাচন করবেন কীভাবে?

দলীয় সিদ্ধান্তে দুটি আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। এই দুই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন হিরো আলম। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর গরমিলের কারণ দেখিয়ে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।