পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে শুরু হয়ে গেছে কোরবানির পশু কেনাবেচা। এ বছর কোরবানি উপলক্ষে খামারের সংখ্যা বেড়েছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। তবে দ্রব্যমূল্যসহ গোখাদ্যের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। উপজেলায় কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য অনলাইনে পশুর হাট নামে বেশ কয়েকটি ফেসবুক আইডি খোলা হলেও তেমন সাড়া নেই বলে জানান খামারি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার প্রায় অর্ধশত গ্রাম ও চরাঞ্চলে বিপুলসংখ্যক খামারি গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া পালন করে থাকেন। কোরবানির আগে এসব পশু বিক্রির আয়ের টাকা দিয়ে সারা বছর সংসার চলে তাঁদের। উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতকান্দি এলাকার রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী তাঁর বাড়ির খামারে ২০টি গরু বিক্রি করার জন্য প্রস্তুত করেছেন এবার। পশু বিক্রির বিষয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি খামারে গরু পালন করছেন। তাঁর খামারে ব্রাহামা ও ফ্রিজিয়ান জাতের কয়েকটি গরুর ওজন ২৫ থেকে ৩০ মণ ছাড়িয়ে যাবে। গরুগুলো এবার কোরবানির হাটে বিক্রি করবেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরুগুলো বিক্রি নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের এক-দুই মাস আগে থেকে ব্যাপারীরা এসে গরুর দরদাম করে নিয়ে যেতেন। এবার এখন পর্যন্ত ব্যাপারীদের কোনো খোঁজখবর নেই। এবার মনে হয় তাঁকে লোকসান গুনতে হবে।
রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীর মতো গরুর দাম ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন আরও অনেক খামারি। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ হাটে ক্রেতা কম থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। চরাঞ্চলের সরকারি ও ফসলি জমি ভূমিদস্যুরা দখলে নেওয়ায় গরু-মহিষের চারণভূমি ছোট হয়ে আসছে। ফলে গোখাদ্য নিয়ে নতুন করে খামারিরা চিন্তায় পড়েছেন।
এদিকে ডলার–সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা সমস্যার কারণে বাজারে গোখাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। খামারিরা বলেন, করোনার আগে এক বস্তা গমের ভুসির দাম ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায়। এ ছাড়া খইলসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির দানাদার গোখাদ্যের (সম্পূরক) ২৫ কেজির একেকটি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। প্রণোদনা না দিয়ে গোখাদ্যের দাম কমিয়ে দিলে উপকৃত হতেন বলে জানান অধিকাংশ খামারি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু আনা বন্ধ থাকায় এবার উপজেলায় খামারির সংখ্যা বেড়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার ৮৮টি খামার বৃদ্ধি পেলেও পশুর সংখ্যা বাড়েনি। গত বছর উপজেলায় খামারির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৩০। পশু পালন করা হয় ১৮ হাজার ৯০০টি। এবার উপজেলায় ১ হাজার ৭১৮টি খামারে কোরবানি উপলক্ষে পালন করা হচ্ছে ১৮ হাজার ৭৫৮টি পশু। কিন্তু উপজেলায় চাহিদা রয়েছে ২২ হাজার পশুর। চাহিদার চেয়ে ৩ হাজার ২৪২টি পশু কম রয়েছে, যা বাইরে থেকে জোগান দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেবু লাল দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় ২৫টির বেশি কোরবানির হাট বসবে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে পশু কেনাবেচা কেমন হয়। গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কোরবানির পশুরও দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে উপজেলার যেসব বাজারে বেশি পশু বিক্রি হয়, সেখানে ক্রেতাদের উপস্থিতি নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। তিনি সব খামারিকে অনলাইনে পশুর হাট বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন। হাটের জন্য বসে না থেকে খামারিদের বাড়ি গিয়ে বা অনলাইনে পশু কেনার জন্য ক্রেতাদের আহ্বান জানান তিনি।