প্রতিবারের মতো কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় এবারও রেওয়াজ অনুযায়ী বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছোড়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৯টায় মাঠটির ১৯৭তম জামাত শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন জেলা সদর মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভোর থেকেই দলে দলে মুসল্লি ঈদগাহ ময়দানে আসতে শুরু করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশপথে প্রত্যেকের দেহ তল্লাশি করা হয়। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির কাজ থাকায় ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদ জামাতে মুসল্লির সংখ্যা সাধারণত কম থাকে। তবে অনেকেই নিয়মিত এ মাঠে নামাজ আদায় করে আসছেন।
দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত আদায় করেন মো. খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, এবারও মাঠটিতে নামাজ আদায় করতে পেরে বেশ খুশি তিনি। এ রকম অনেকেই দূরদূরন্ত থেকে ঈদের নামাজ আদায় করে মনের আশা পূরণ করেন। নামাজ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে মোনাজাত করে বাড়ি ফেরেন তাঁরা।
২০১৬ সালের ৭ জুলাইয়ের জঙ্গি হামলার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। সকাল থেকেই ঈদগাহ ময়দানে বিজিবি সদস্যসহ র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সাদাপোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও বোমা ডিসপোজাল টিমের সদস্যদের তৎপরতা ছিল। ওয়াচ টাওয়ারসহ পুরো ঈদগাহ ময়দান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল। এ ছাড়া ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল দল উপস্থিত ছিল।
মাঠটিতে নামাজ আদায় শেষে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছেন। দূরদূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা আছে।
নির্বিঘ্নে নামাজ শেষে মুসল্লিরা ঘরে ফেরায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ঈদুল ফিতরের দিন অপ্রত্যাশিত হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও মাঠে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঈদুল ফিতরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা কম হলেও নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে প্রথমবার ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে ঈদগাহটি এক সময় ‘সোয়া লাখিয়া’ থেকে ‘শোলাকিয়া’ ঈদগাহ মাঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তবে এ বিষয়ে অনেক ইতিহাসবিদের দ্বিমত আছে। আরেকটি মত, মোগল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল শ লাখ বা এক কোটি টাকা। কালের বিবর্তনে ‘শ লাখ’ থেকে বর্তমান ‘শোলাকিয়া’ হয়েছে।