ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি ২০১৯ সাল থেকে দুটি ধারায় বিভক্ত। এ বিভক্তির ধারায় অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বিভক্তির এ ধারা বজায় থাকবে বলে ধারণা করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
এবার চার ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যার প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলা পরিষদে ভোট হবে আগামী ৮ মে। এই ধাপে ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর সেটি আরও গতি পেয়েছে। বিশেষ করে রোজার মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে মানুষের কাছে যাচ্ছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের দুজন সম্ভাব্য প্রার্থী। তাঁরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ডেভিড রানা (চিসিমি) ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আকন্দ (সাগর)।
সংসদ নির্বাচনে ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ্বাসের নেতৃত্বে একাংশ নৌকার প্রার্থী জুয়েল আরেংয়ের বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হককে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ময়মনসিংহ-২ (হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহমুদুল হক। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বজায় থাকছে সংসদ নির্বাচনের বিরোধপূর্ণ ধারা। সংসদ সদস্য নিজে বিভিন্ন সভায় চেয়ারম্যান পদে আসাদুজ্জামান আকন্দের নাম ঘোষণা করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ নেতা প্রিয়তোষ বিশ্বাস। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ডেভিড রানা। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ এখনো আছে।
বিরোধপূর্ণ একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন প্রিয়তোষ। আর অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ডেভিড রানা। সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জুয়েল আরেংয়ের সমর্থন ছিল ডেভিড রানার প্রতি। যে কারণে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই প্রিয়তোষ বিশ্বাসের পক্ষ জুয়েল আরেংকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবিতে সভা-সমাবেশ করেন। নির্বাচনে জুয়েল আরেং মনোনয়ন পেলে প্রিয়তোষ বিশ্বাসের পক্ষ সরাসরি জুয়েল আরেংয়ের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক সায়েমকে সমর্থন দেন। নির্বাচনে মাহমুদুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
উপজেলায় সংসদ সদস্য ও প্রিয়তোষ বিশ্বাসের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আকন্দ। আবারও নির্বাচন করবেন বর্তমান চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম। এ দুই প্রার্থীকে ঘিরেই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রধান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভক্তি রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে আমরা যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক সায়েমের পক্ষে ছিলাম, তাঁরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আসাদুজ্জামান আকন্দের পক্ষে কাজ করছি।’
বর্তমান চেয়ারম্যান ডেভিড রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের কাজ শুরু করেছি। সম্প্রতি ঢাকায় বসবাসরত ধোবাউড়াবাসীর সঙ্গে দেখা করে এসেছি। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেও কর্মীদের সঙ্গে সভা করছি।’
এই দুই প্রার্থীর বাইরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন ধোবাউড়া উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজনু মৃধা। মজনু মৃধার বড় ভাই ফুকরানউদ্দিন সেলিম ওরফে পাহাড়ি সেলিম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন।
দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলটির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দুজন প্রার্থী হতে পারেন। তাঁদের একজন গোয়াতলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শামসুর রশিদ। অপরজন ফরিদ আল রাজি।