নাটোর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নাটোরকে অশান্ত করার অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের নির্দেশে তাঁর চিহ্নিত সহচরেরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজকে রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে পিটিয়েছেন। বাড়াবাড়ির ফল ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের আলাইপুরে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল সোমবার ভোরে জনসমাবেশ কর্মসূচির প্রস্তুতি নিতে নিজ বাড়ি থেকে দলীয় কার্যালয়ে আসছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ। পথে তাঁকে রাস্তায় ফেলে হাতুড়ি ও লোহার পাইপ দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের নির্দেশে তাঁর চিহ্নিত সহচরেরা এ হামলা চালান। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থ ব্যক্তিকে বিনা কারণে আহত করে রাজনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এ ঘটনার পর সংসদ সদস্য নিজে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দেখামাত্র মারপিট করার হুকুম দিয়েছেন, যা নাটোরের রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম ও তাঁর প্রতিপক্ষ শরিফুল ইসলাম দুটি পক্ষ (গ্রুপ) গঠন করে সহিংসতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। নাটোরকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সহিংস রাজনীতি পরিহার করে শান্তিপূর্ণ, অহিংস রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। তাই ধৈর্য ধরে আছি। কিন্তু ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের জন্য ভালো হবে না। আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’
সংসদ সদস্য শফিকুলকে হুঁশিয়ার করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ির ফল ভালো হবে না। পরিস্থিতি খারাপ হলে আপনি কানাডায় বেগমপাড়ায় চলে যাবেন। কিন্তু যাঁদের দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করাচ্ছেন, তাঁদের কী হবে? ভুলে যাবেন না, আমরা একই শহরের বাসিন্দা। একজন পিতার বয়সী মানুষকে ছেলের বয়সী তরুণদের দিয়ে পিটিয়েছেন। এটা কোন রাজনীতি?’
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘হোন্ডা আর গুন্ডা দিয়ে নাটোরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন এবং এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে আসছি এবং করে যাব। পায়ে পা দিয়ে বিবাদ করার চেষ্টা করবেন না।’
স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দেশে সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, নাটোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান, বাবুল চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মীরা ভীত নন। হুমকি–ধমকি দিয়ে লাভ হবে না। কোন টোকাই কী বলল, তাতে আমার কিছু যায়–আসে না।’ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিএনপির নেতাদের মারপিট করার হুকুম দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যারা করবে, আগুন–সন্ত্রাস যারা করবে, মানুষের ঘরবাড়ি যারা পোড়াবে, তাদের আমি হুঁশিয়ার করেছি। এও বলেছি যে ২০১৪ সালের মতো কেউ আগুন–সন্ত্রাস করলে তার বাড়ি সিলগালা করা হবে। বিএনপির নেতারা যদি এসব করে, তাহলে তাই করা হবে।’
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজকে মারপিটের প্রতিবাদে বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছেন। বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল আলমের নেতৃত্বে বনপাড়ায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. বকুল প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।