ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৬ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে মাদ্রাসাছাত্র হুসাইন আহম্মেদ নিহত হওয়া ঘটনায় গতকাল শুক্রবার রাতে সদর মডেল থানায় মামলাটি করা হয়। মামলাটি করেন নিহত হুসাইনের বোন তানিয়া আক্তার। হুসাইন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। তিনি আখাউড়ার মনিয়ন্দ এলাকার বাসিন্দা।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। উবায়দুল মোকতাদিরকে এ মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মোকতাদির চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।
মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এম সাইদুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাসান সারোয়ার হাসান, দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক সুজন দত্ত, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রহমান, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ মঞ্জুরে মাওলা ফারানী, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আলী আজম ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে করা হয়, ঘটনার সময় প্রধান আসামি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিনা ভোটের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি আলেম-উলামাদের সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর করেন। সেই সফরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে মোদিবিরোধী আন্দোলন হয়। পরদিন ২৭ মার্চ সকালে হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের সমর্থনে জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ওই দিন বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী লাঠিসোঁটাসহ অবৈধ পিস্তল, শটগান, রাইফেল, ককটেল নিয়ে শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার সামনে দিয়ে যায়। তখন মোকতাদিরের ইশারা ও নির্দেশে আসামিরা মাদ্রাসায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেন। এ সময় মাদ্রাসাছাত্র হুসাইন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় পুলিশের অসহযোগিতা ও দমন-নিপীড়নের ভয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।