কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল

লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা

সাত দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ চরে অন্তত নয়টি গরু মারা গেছে। কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কা।

কুড়িগ্রাম জেলার মানচিত্র
কুড়িগ্রাম জেলার মানচিত্র

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। গত সাত দিনে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ চরে অন্তত নয়টি গরু মারা গেছে। কোরবানির ঈদের আগে গরুর অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত কৃষক ও খামারিরা।

গরুর লাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত রোগ। এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। এই রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে প্রথমে জ্বর দেখা দেয় এবং খাবারের রুচি কমে যায়। জ্বর বেশি হলে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়। আক্রান্ত গরুর বুকের নিচে দুই পায়ের মাঝে পানি জমে।

গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় গুটি গুটি ক্ষত হয় এবং পচন ধরে। সেই সঙ্গে চামড়া থেকে লোম উঠে যায়। এই রোগে আক্রান্ত পশুর সুস্থ হতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। বড় গরু লাম্পি স্কিন রোগে তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকলেও বাছুর গরু আক্রান্ত হলে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে।

এ সম্পর্কে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ ও তরল খাবার খাওয়াতে হয়। এ ছাড়া আর কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণত এই রোগে গরুর মৃত্যুঝুঁকি কম। তবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, রোগা ও বাছুরের মৃত্যু হতে পারে। চাষিদের নিয়ে উঠান বৈঠক করাসহ ইউনিয়ন ভ্যাক্সিনেটরদের মাধ্যমে খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে জেলায় প্রথম লাম্পি স্কিন রোগে গরুর আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই।

গত কয়েক দিনে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের গোয়ালপুরি ও ঝুনকারচর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের মাঝের আলগা, মেকুরের আলগা ও পূর্ব দইখাওয়ার চর এবং উত্তর নামাজের চর ঘুরে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর দেখা পাওয়া যায়।

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের উত্তর নামাজের চর এলাকার কৃষক ময়নাল হকের দুটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। গত সোমবার ওই চরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ওই গরু দুটির পরিচর্যা করছেন। ময়নাল হক বলেন, দুটি গাভি ও কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য একটি ষাঁড় পালন করছেন। লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গাভি দুটি কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। শরীরের চামড়ার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত হয়ে গেছে। ঠিকমতো খাবার খাচ্ছে না। ষাড়ের শরীরে ক্ষত নেই। তবে শরীরে জ্বর বেশি হওয়ায় ঠিকমতো ঘাস খায় না। কয়েক দিনেই গরু রোগা হয়ে গেল।

মাঝের আলগার চরের কৃষক আবদুল মমিন বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর ভাইয়ের একটি বড় গরু তিন দিন আগে মারা গেছে। তাঁর একটি গরু অসুস্থ। আশপাশের চরগুলোতে গত সাত দিনে নয়টি গরু মারা গেছে। ঈদের হাটে বেচাকেনার জন্য চরের প্রায় প্রত্যেক কৃষকই দু-একটি করে গরু পালন করেন। লাম্পি স্কিন রোগে এবারে গরু রোগা হয়ে গেছে। চামড়ায় ঘা দেখা দিয়েছে। এবারের ঈদে গরু থেকে তেমন লাভ পাওয়া যাবে না।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন ভ্যাক্সিনেটর খলিলুর রহমান বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত সাতটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত পশুর সঠিক যত্ন নিলে এই রোগে একটি গরুও মারা যাবে না। আক্রান্ত গরু ১০ দিন থেকে সর্বোচ্চ এক মাস অসুস্থ থাকে। কিছু পল্লিচিকিৎসক মৃত্যুঝুঁকির ভয় দেখিয়ে ভুল চিকিৎসা দেন।