ভাঙা সড়কের গর্তে পানি জমেছে। গর্তের কারণে হেলেদুলে চলছে যানবাহন। এর মধ্যেই হঠাৎ কয়েকটি শিশু গর্তে নেমে মাছ ধরছে। তাদের কারও কারও হাতে দু–তিনটি করে মাছ। দৃশ্য দেখে আশপাশের সবাই অবাক। কেউ কেউ বেহাল রাস্তা নিয়ে হাসিঠাট্টাও করছেন।
সম্প্রতি ভাঙা সড়কে শিশুদের মাছ ধরার ২৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটি গাজীপুর নগরের রাজবাড়ি সড়কের পৌর মার্কেট এলাকার রাস্তার। গত বুধবার ওই ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে ফেসবুকে প্রকাশ করেন মো. ইমরান নামের এক ব্যক্তি।
ভিডিওর ক্যাপশনে ইমরান লেখেন, ‘আমাদের জয়দেবপুরের রেল গেটে (পৌর মার্কেট ও রেলের গেট কাছাকাছি) চলছে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা।’ সঙ্গে তিনি একটি ঠাট্টার ইমোজি জুড়ে দেন। মুহূর্তেই ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ব্যবহারকারী পোস্টে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ভিডিওটি ‘ট্রাভেলারস এক্সপ্রেস গাজীপুর’ নামের একটি ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করা হয়। সেটি আজ বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত ৮৯ হাজার ২০০ জন ব্যবহারকারী দেখেছেন। শেয়ার হয়েছে ৪৭৮টি।
গাজীপুর নগরের শিববাড়ি মোড় থেকে ভাওয়াল রাজবাড়ির দিকে (বর্তমান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) একটি সড়ক চলে গেছে। এটি রাজবাড়ি সড়ক নামে পরিচিত। সড়কটির মাইক্রোস্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ি ঢাল পর্যন্ত ৬০০ মিটার খুবই বেহাল। বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন উঠে গেছে। কিছু স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। গর্তের কারণে মাঝেমধ্যেই যানবাহন উল্টে যাত্রীরা আহত হন। এরপরও সড়কটি সংস্কার করা হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যক্তিদের। এর মধ্যে গত বুধবার রাস্তার গর্তে শিশুদের মাছ ধরার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে ওই সড়ক দিয়ে একটি মাছবোঝাই ট্রাক নগরের জোড়পুকুরের দিকে যাচ্ছিল। ট্রাকটি পৌর মার্কেট এলাকায় যেতেই গর্তে পড়ে কাত হয়ে যায়। তখন ট্রাক থেকে কিছু মাছ গর্তে ছিটকে পড়ে। এটি দেখে আশপাশের শিশুরা মাছ ধরতে গর্তে নেমে পড়ে। তখন ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের গর্তের কারণে যানবাহন খুবই ধীরগতিতে চলছিল। এর মধ্যে হঠাৎ একটি ট্রাকের চাকা গর্তে পড়ে বিশাল ঝাঁকুনি খায়। এতে ট্রাক থেকে কিছু মাছ সড়কে ছিটকে পড়ে। সেটা দেখে আশপাশের শিশুরা গর্তে মাছ ধরতে নামে। তিনি বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে খারাপ। মাঝেমধ্যে সেখানে যানবাহন উল্টে যায়।
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম বলেন, ‘আমি ফেসবুক চালাই না। তাই বিষয়টি জানা নেই। তবে রাস্তাটির বিষয়ে আমাদের মিটিং হয়েছে। রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।’ কবে সংস্কার হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আমাদের সাক্ষাৎকার দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আছে।’
বেহাল ওই সড়ক নিয়ে বুধবার প্রথম আলোতে ‘৬০০ মিটার সড়কে সীমাহীন ভোগান্তি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তখন রাস্তাটি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল ও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়।
জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী রাস্তাটি দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এ বিষয়ে আমি অন্তত ১০ বার মুঠোফোনে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। রাস্তাটি মেরামতের জন্য অনুরোধ করেছি; কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী।’
জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিপিপি প্রজেক্ট করে সিটি করপোরেশন নিজেরাই রাস্তাটির কাজ করবে। আমি নিজেও রাস্তাটি মেরামতের জন্য অসংখ্যবার বলেছি; কিন্তু কাজ হয় না।’