বুকের পাটা থাকলে গণভোট দিন, জনগণ বাটপারি প্রমাণ করে দেবে: হিরো আলম

বগুড়া-৪ আসনের কাহালু ও নন্দীগ্রামে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেছেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল এলাকায়
ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে ফল পাল্টানোর যে অভিযোগ উঠেছে, এর ভিত্তি নেই বলে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর এ মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। তিনি বলেন, ‘আপনাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, বুকের পাটা থাকলে গণভোট দিন। জনগণ সব বাটপারি প্রমাণ করে দেবে।’

আজ শুক্রবার নির্বাচনী এলাকা কাহালু সদরের স্টেশন বাজারে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ওই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। গত বুধবারের এ উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৫ ভোটে হেরে যান হিরো আলম।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপরিউক্ত মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা।

হিরো আলম আজ দুপুর ১২টার দিকে কাহালু সদরের স্টেশন বাজারে গেলে সেখানে স্থানীয় লোকজন জড়ো হন। এ সময় তাঁদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবাই দেখেছেন, গতকাল নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রতিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রার্থীরা এসব কথা বলেনই যে ভোট সুষ্ঠু হয়নি, কারচুপি হয়েছে। এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।” নন্দীগ্রাম উপজেলায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে নাকি আমার কোনো এজেন্ট ছিল না। ফল পাল্টানোর যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার নাকি ভিত্তি নেই, সাক্ষ্যপ্রমাণও নেই।’

এ সময় রাশিদা সুলতানার উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘ক্ষমতায় আছেন তো অনেক বড় বড় কথা বলেন। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, ফল বাতিল করে গণভোট দেন। একতারা প্রতীকে হিরো আলম, মশাল প্রতীকে তানসেন (এ কে এম রেজাউল করিম) প্রার্থী থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি দেন। আপনারা সব নির্বাচন কমিশনার মাঠে আসেন। মশাল নাকি একতারা—কে বেশি জনপ্রিয় প্রমাণ করতে গণভোট দেন। যদি একতারা হেরে যায়, আমি নাকে খত দেব, জীবনে কখনো নির্বাচনে যাব না।’

নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানার উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘আপনি মাঠে এসে অভিযোগের তদন্ত না করে ঢাকা থেকেই হুট করে মন্তব্য করলেন। আপনি নন্দীগ্রামে এসে দেখেছিলেন, আমার এজেন্ট ছিল না? এজেন্ট ছিল, কিন্তু ফলাফলের কাগজ দেওয়া হয়নি। ভোট নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ ছিল না, এখনো নেই। ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটে হেরে যাইনি। ফল চুরি করেছেন। এ কারণে ফলাফলে হেরেছি।’

হিরো আলম আরও বলেন, ‘আমার এমপি হওয়া নিয়ে, সংসদে যাওয়া নিয়ে অনেকের ঘুম হারাম, মাথা কামড়ায়। একজন এমপির কাজ কী? সংসদে কথা বলা। আমি কি কথা বলতে পারি না? আমার চেহারা নিয়ে এত আপত্তি কেন? এত নাটক কেন? সেখানে কেন ভালো চেহারার লোক লাগবে? আমাকে সংসদে নিয়ে গিয়ে কি অভিনয় করাবেন? আমি আপনাদের মতো ভালো কথা বলতে পারি না। বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি, এ জন্য আপনাদের বাঁধে। আপনাদের মা-বাবা আছে জন্য পড়ালেখা করতে পেরেছেন, শিক্ষিত হয়েছেন। স্পিকার হয়েছেন, মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন, কমিশনার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। আমাদের মতো নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা হলে এটা হতে পারতেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেন। অনেক এমপি তো স্বশিক্ষিত। সংসদে ঠিকমতো “স্পিকার” উচ্চারণ করতে পারেন না। আপনাদের এত যোগ্যতা থাকলে দেশের এই অবস্থা কেন? কেন জনগণ আপনাদের ধিক্কার দিচ্ছে।’

মুরইল এলাকায় একজন ভ্যানচালকের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন হিরো আলম

দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, উপনির্বাচনে নানা অনিয়ম ও ফল পাল্টানো নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। কারণ, জেলা প্রশাসক সরকারের আজ্ঞাবহ। সরকারের অধীন চলছে। সরকারের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

ইভিএমকে ভোট চুরির মেশিন বলে উল্লেখ করেন হিরো আলম। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ইভিএম ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ভোট কারচুপি করতে এসব ইভিএম কুড়িয়ে এনে নির্বাচনের নামে প্রহসন করছে। এসব ইভিএম ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া উচিত।

বগুড়া-৬ আসনে জামানত হারানোর প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, এরুলিয়া বাদে কোনো ইউনিয়নে কেন্দ্রে এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সব কেন্দ্র আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা দখল করে নিয়েছেন। বগুড়া-৬–এ ভোট ডাকাতি হয়েছে, আর বগুড়া-৪–এ ভোটের ফল ছিনতাই হয়েছে।

বগুড়া-৪ আসনের ভোটারদের উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘আপনারা ভোট দিয়েছেন, সেই ভোটে আমি বিজয়ী হয়েছি। আমি জনতার এমপি। ফলাফলে আমাকে হারানো হয়েছে। (ভোটের দিন) গোটা বিশ্ব আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ভোট গ্রহণ শেষে কাহালুতে দুই হাজার ভোটে এগিয়ে। নন্দীগ্রামেও বিপুল ভোট পেয়েছি। অথচ আমাকে এমপি মেনে নিতে না পেরে রাতারাতি ভোটের ফল পাল্টিয়ে ফেলা হয়েছে। এ অন্যায়ের বিচারের ভার আমি আপনাদের কাছে ছেড়ে দিলাম।’

বগুড়ার দুটি আসনের এই স্বতন্ত্র প্রার্থী আরও বলেন, নন্দীগ্রামে ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ থেকে ৩৯টি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা করা হয়। এরপর ফলাফল ঘোষণায় বিরতি দেওয়া হয়। কিছু সময় পর ১০ কেন্দ্রের ফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা না করেই জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে হঠাৎ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

ভোটারদের অনেকেই কান্নাকাটি করছেন, মন খারাপ করেছেন দাবি করে হিরো আলম বলেন, ‘এ জন্যই আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমরা হারিনি। ভোটে জয়ী হয়েছি। আমাদের ফল ছিনতাই হয়েছে। ছিনতাই হওয়া ফল উদ্ধারে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আপনারা ভোট দিয়েছেন, সেই ভোটের ফল বুঝিয়ে দিতে হবে। না হলে পুনর্নির্বাচন দিতে হবে।’

বুধবার বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর হিরো আলম অভিযোগ করেন, উপনির্বাচনের ফলাফলে কারচুপি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুই উপজেলার ১১২টি কেন্দ্রেই এজেন্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের ফলাফলের স্বাক্ষরিত কপি দেওয়া হয়নি।’