নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় আটকে রেখে এক তরুণকে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে। থানাহাজতে আটক বড় ভাইয়ের খবর নিতে ওই তরুণ থানায় গিয়েছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী তরুণের নাম আবদুল্লাহ আল নোমান (২২)। তিনি একটি দোকানের কর্মচারী। আহত অবস্থায় তাঁকে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মারধরে অভিযুক্ত উপপরিদর্শকের নাম সঞ্জয় সিকদার। পরিবারের সদস্যরা জানান, আটক শাহাদাত দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। দেশে এসে ভাইয়ের সঙ্গে একই দোকানে কাজ করেন। থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
আবদুল্লাহ আল নোমান সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের উত্তর কাদরা মজুমদার বাড়ির বাসিন্দা। নোমানের বরাত দিয়ে তাঁর মা তৈয়বের নেছা প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে তাঁর বড় ছেলে শাহাদাত হোসেনকে বাড়ির পাশ থেকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। খবর পেয়ে তাঁর ছোট ছেলে নোমান বড় ভাইয়ের খোঁজ নিতে থানায় যান। থানায় উপপরিদর্শক সঞ্জয় সিকদারের কাছে শাহাদাত হোসেনকে আটকের কারণ জানতে চান। এ সময় ওই উপপরিদর্শকের সঙ্গে নোমানের কথা-কাটাকাটি হয়। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে নোমানকে থানার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বেধড়ক পিটিয়েছেন ওই উপপরিদর্শক। এতে নোমান অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাঈম উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বেলা একটার দিকে ওয়াকিটকিসহ সাদাপোশাকের এক পুলিশ সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমানকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। নোমানের বুকে ও পিঠে জখম রয়েছে, তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে হাসপাতালে রাখা হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালে উপস্থিত আহত নোমানের একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শাহাদাতকে ছেড়ে দেওয়ার নামে এক রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছেন সঞ্জয় সিকদার। এরপরও শাহাদাতকে ছেড়ে না দিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরের জন্য তাঁদের চাপ দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা ওই কাগজে স্বাক্ষর করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপপরিদর্শক সঞ্জয় সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, শাহাদাত হোসেনকে গাঁজাসহ আটক করা হয়েছে। তাঁকে থানায় আনার পর তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সামান্য ঝামেলা হয়েছে। নোমান নামে কাউকে তিনি চেনেন না। নোমানকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন, সেটিও তিনি জানেন না।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, গাঁজাসহ এক ব্যক্তিকে ধরে আনার পর তাঁর ভাই থানায় এসে ঝামেলার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁকেও হাজতে ঢোকানো হবে বলা হলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় সিঁড়িতে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন। মারধরের অভিযোগ সত্য নয়। এ বিষয়ে তাঁকে কেউ অভিযোগ করেননি।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশারাফুল রাজীবকে নির্দেশ দিয়েছেন।