বানেশ্বর বাজারে মিলছে সব জাতের আম, দামের দাপট হিমসাগরের

আম নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রতারা। শনিবার রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

ভালো দাম পাওয়ার আশায় রাজশাহীর বাজারে ইতিমধ্যে আশ্বিনা বাদে প্রায় সব জাতের আম নিয়ে হাজির হয়েছেন চাষিরা। তবে ভরা মৌসুম চলছে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি আমের। হিমসাগরের দামও চড়া। একজন ব্যবসায়ী এক মণ হিমসাগরের দাম হাঁকছেন ৪ হাজার ৫০০ টাকা। তবে ব্যবসায়ীরা বলেন, এবার আমের দাম ভালো হলেও সরবরাহ কম।

শনিবার রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। দুপুরে বানেশ্বর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের পশ্চিম মাথা থেকে পূর্ব মাথা পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটারে আম নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ রাস্তার পাশে মাটিতে আম নিয়ে বসেছেন, কেউ ভ্যানগাড়ির ওপর রেখেই বেচাকেনা করছেন। বাজার ঘুরে জানা গেল, আশ্বিনা বাদ দিয়ে প্রায় সব জাতের আম বাজারে এসেছে। না পাকলেও ফজলি আম উঠেছে বাজারে।

ব্যবসায়ী রাজন আলী ১০০ কেজি ফজলি আম কিনেছেন। তিনি বলেন, প্রতি মণ ফজলি আম ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ হিসাবে বিক্রি হচ্ছে। না পাকলেও ফজলি আম আচার তৈরি করার জন্য এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।

যদিও ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী ফজলি ও আম্রপালি ১৫ জুন থেকে বাজারে আসার কথা। কিন্তু টানা খরার কারণে এবার আম পাকতে কয়েক দিন বিলম্ব হচ্ছে। ফলে ফজলি এখনো পাকা শুরু হয়নি। আম্রপালিও পাকা শুরু হয়নি। তবে ল্যাংড়া আম পাকা শুরু হয়েছে এবং বাজারে তা প্রচুর পরিমাণে আমদানিও হয়েছে। এ আম ১০ জুন থেকে পাড়ার কথা।

প্রশাসনের আম পাড়ার সময়সূচি নির্ধারণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ী সোহাগ আলী বলেন, ‘শুধু এসি রুমে বসে আম পাড়ার সময়সূচি নির্ধারণ করলে হবে না। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ল্যাংড়া আম ১০ জুন থেকে নামাতে হবে, অথচ বাজারে ৩০ মে থেকেই ল্যাংড়া আম বিক্রি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, আম্রপালিও ১৫ জুন থেকে পাড়ার কথা ছিল। সেই আম চার-পাঁচ দিন আগে থেকেই তাঁরা বিক্রি করছেন।

কেউ কেউ ভ্যানের ওপরেই ক্যারেট সাজিয়ে রেখেছেন। বিক্রতারা বলছেন এবার দাম চড়া আমের

‘রাজশাহীর আমের রাজা হিমসাগর’ বলে ক্রেতাদের ডাকছেন ব্যবসায়ী নয়ন শেখ। তাঁর ডালিতে সাজানো হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি আমের দুই রকম দাম। তাঁর এক ডালির ক্ষীরশাপাতি আমের দাম প্রতি মণ সাড়ে চার হাজার টাকা এবং অপর ডালির আমের দাম প্রতি মণ চার হাজার টাকা হিসাবে হাঁকছেন। তবে বেশি করে কেউ কিনলে কিছুটা কম দামে দিতেও তিনি রাজি আছেন। তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার জাহিদ হাসান বলেন, ঈদের জন্য বাজার কিছুটা থমকে আছে। ঈদের পর এই ক্ষীরশাপাতি আম ছয় হাজার টাকা মণ মানুষকে কিনতে হবে।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। এই বাজারের কাছারি মাঠ অংশটুকু শুধু আম কেনাবেচার জন্য আলাদাভাবে ইজারা দেওয়া হয়। ইজারাদারদের একজন আল হাফিজ ইসলাম আমের বাজারে খাতাপত্র নিয়ে বসেছিলেন। তিনি বলেন, এই আমের বাজার শুধু এ মৌসুমের জন্য আলাদাভাবে ইজারা নেওয়া হয়। এবার ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তাঁরা বানেশ্বর বাজারের মূল ইজারাদারের কাছ থেকে নিয়েছেন। এবার ব্যবসা করে টাকা তোলা মুশকিল হয়ে যাবে। আমের দাম বেশি আছে, কিন্তু আমের সরবরাহ গত বছরের তুলনায় মাত্র ২৫ শতাংশ। আম বেশি না হলে তাঁদের খাজনা বেশি আদায় হয় না।

নরসিংদীর ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান ১৫ দিনের আগে রাজশাহীতে এসে আম কিনছেন। তিনি বলেন, আমের দাম প্রতিদিন মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে একটা গাড়ি প্রস্তুত করতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক সময় দামে না পোষানোর কারণে ট্রাকে না দিয়ে যাত্রীবাহী বাসে পাঠাতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনি সাত গাড়ি আম রাজশাহীর বাইরে পাঠিয়েছেন।

বানেশ্বর বাজারের আমের একজন বড় আড়তদার জারমান আলী বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার আমের দাম দ্বিগুণ। কিন্তু বাজারে গতবারের চেয়ে এবার আমের সরবরাহ প্রায় ৭৫ শতাংশ কম। এবার ব্যবসা করে তেমন পোষানো যাচ্ছে না। তবে যতটুকু লাভ হচ্ছে, তা আমচাষিদের। যাঁদের আম আছে, তাঁদের এবার বেশ সুদিন। এ বছর এ পর্যন্ত তিনি দুই হাজার মণ আম কিনতে পেরেছেন। অথচ গত বছর এ সময় তাঁর অন্তত পাঁচ হাজার মণ আম কেনা হয়ে গিয়েছিল।

তবে আমের উৎপাদন এত কম হওয়ার ব্যাপারে আপত্তি আছে রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক উম্মে সালমার। তাঁর মতে, এবার লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ আম কম হতে পারে। তিনি বলেন, এবার রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। বড় আমগাছগুলোতে এবার আম কম আছে, কিন্তু ছোট গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আম আছে এবং ছোট গাছের বাগানও অনেক বেড়ে গেছে।