আজকে আমরা ত্বকী হত্যার এক যুগের কাছে দাঁড়িয়ে ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার দ্বারা নিহত সব হত্যার বিচার চাই।
মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪১ মাস উপলক্ষে আজ রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি এসব কথা বলেন। এই মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচির আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা সঞ্চালনা করেন।
বক্তব্য দেন রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সিপিবি শহর সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী, বাসদ জেলা সংগঠক এস এম কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা প্রমুখ।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে বিচারব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে রেখেছে, তার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন এখনো হয় নাই। দেড়-দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণদান, পাঁচ শতাধিক চিরতরে অন্ধ হয়ে যাওয়া, সতেরো হাজার আহত হওয়ার বাংলাদেশ বিচারহীনতার বাংলাদেশ হতে পারে না। শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার নির্দেশে সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যার বিচারটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচারপ্রক্রিয়া আবার শুরু করলেও তদন্তের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নিয়ে যেমনি প্রশ্ন রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে ঘাতক ওসমান পরিবারের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন। আজকে পরিবর্তিত বাংলাদেশে পতিত স্বৈরাচারদের পুনরুত্থান মানব না। নারায়ণগঞ্জে গত ১৫ বছর ওসমান পরিবারের লুটপাটের সহযোগীরা এখনো আইনের আওতার বাইরে রয়েছে, কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তারা বহাল তবিয়তে রয়েছে।’
মাহবুবুর রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ওসমান পরিবার পালিয়ে যায় কীভাবে? তার দোসররা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বহাল থাকে কীভাবে? তাদের দোসররা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বহাল থেকে ওসমান পরিবারকে সহায়তা করে যাচ্ছে। শামীম ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ ত্বকীসহ সব হত্যার বিচার চাই।’
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।