উপাচার্যের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে
উপাচার্যের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ক্লাস বর্জন চলাকালে উপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

সাত দফা দাবিতে ১৯ মার্চ থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ডাকে টানা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলছে। এই কর্মসূচির মধ্যেই আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাদদেশে উপাচার্যের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সমিতির সদস্যরা।

মানববন্ধনে উপাচার্যের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন শিক্ষক নেতারা। তাঁরা উপাচার্যকে একজন ‘অদক্ষ’ প্রশাসক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু তাহের, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাছান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দী, মোহাম্মদ আইনুল হক, শামিমুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাবেক ডিন মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার, সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য শেখ মকছেদুর রহমান প্রমুখ।

দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘একজন উপাচার্য কেমন করে শিক্ষকবান্ধবহীন হন? তাঁর সামনে শিক্ষকদের মারার জন্য তেড়ে আসা হয়। তাঁর দপ্তরে বহিরাগত ও পেটোয়া বাহিনী মাস্তানি করে। শিক্ষক হয়ে শিক্ষকদের মর্যাদা যে উপাচার্য রাখতে পারেন না, তাঁকে অদক্ষই বলতে হয়।’

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক সমিতির সদস্যরা বিভিন্ন লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করছেন। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর বর্বরোচিত হামলার বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করুন’। আরেকটিতে লেখা ‘নিয়োগ পদোন্নতির বিধিবহির্ভূত অবৈধ শর্ত বাতিল করতে হবে’। এ ছাড়া ‘পদোন্নতি বঞ্চিতদের অবিলম্বে ডিউ ডেট থেকে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে’, ‘কিশোর গ্যাং, অছাত্র ও পেটোয়া বাহিনীমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘স্বেচ্ছাচারী আচরণ বন্ধ করুন, শিক্ষকদের দাবি পূরণ করুন’, ‘মনগড়া শিক্ষাছুটি নীতিমালা বাতিল করুন’—এমন লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড শিক্ষকদের হাতে দেখা যায়।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগের শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি অধ্যাপক পদে এখনো স্থায়ী হতে পারিনি। উপাচার্যের অনিয়ম ও তথাকথিত শর্তারোপ শিক্ষকদের স্বাভাবিক পথচলাকে রুদ্ধ করেছে।’

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্য তাঁর নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করে দুটি ইনক্রিমেন্ট নিয়েছেন। বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগে অনিয়ম করেছেন। জরুরি সিন্ডিকেট সভার অ্যাজেন্ডা বদলে ফেলেন। শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শর্ত জুড়ে দেন। একগুঁয়েমি মনোভাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন। তাঁর অনুগত শিক্ষকদের জন্য সব ক্ষেত্রে শিথিলতা, সাধারণ শিক্ষকদের বেলায় শর্তারোপ করেন। উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় তিনি অদক্ষ।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের অনিয়ম করিনি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। গবেষণার কাজ, লেখালেখি ও নিয়মিত সব শিক্ষককে ক্লাসমুখী করার তাগিদ দিচ্ছি।’

১৯ মার্চ থেকে শিক্ষকদের সাত দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলমান। দাবিগুলোর মধ্যে আছে—১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করে ঘটনার তদন্ত করা এবং হামলায় মদদ দেওয়া প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে অপসারণ করা, ঢাকার অতিথিশালা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা, অধ্যাপক গ্রেড ১ ও ২-তে আবেদন করা শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ এবং ইতিমধ্যে বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যাহার করা, শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি স্থায়ী করতে আইনবহির্ভূত শর্তারোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্নের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা, ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা প্রত্যাহার করে আগের নীতিমালা বহাল ও ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, উপাচার্য শিক্ষকদের কোনো দাবি নিয়েই আলোচনায় বসছেন না। দ্বৈতনীতি নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন।