নাজিরপুরে ‘ঘুষ নির্ধারণ’

এসিল্যান্ডের পর এবার চার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বদলি

পিরোজপুর জেলার মানচিত্র
পিরোজপুর জেলার মানচিত্র

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় জমির নামজারি করার জন্য ঘুষ নির্ধারণ করে দেওয়ার ঘটনায় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পর এবার চার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। রোববার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. আহসান হাবিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে ভূমি  কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়। তাঁদের আগামীকাল মঙ্গলবার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বদলি আদেশে উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পরিমল কুমার দেকে বরগুনার তালতলী উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে, মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. সুজনকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে, নাজিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শাহজাহান কবিরকে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে এবং শেখমাটিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হাসান হাওলাদারকে বরিশালের হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।

এর আগে ‘ঘুষ নির্ধারণ’ করে দেওয়ার অভিযোগে নাজিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছিল। এরপর গত বুধবার মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, পিরোজপুরের নাজিরপুরে জমির নামজারি করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা ছয় হাজার টাকা করে ঘুষ নেবেন বলে নির্ধারণ করে দিয়েছেন এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান। চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় কথোপকথনের একটি অডিও সম্প্রতি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনা হয়।

জমি বিক্রির পর পুরানো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারি বলা হয়। বিক্রি ছাড়াও উত্তরাধিকার ও দান সূত্রে জমির মালিকানাও পরিবর্তন হয়। এসব জমির মালিকানা পরিবর্তনের পর নতুন মালিকের নামে নামজারি করে রেকর্ড করা হয়। নামজারির জন্য সহকারী কমিশনার ভূমির কাছে আবেদন করতে হয়। নামজারি বা নাম খারিজ করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা। নামজারির পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে উপজেলা ভূমি ও ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলাই মাসে নাজিরপুর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। সভায় তিনি জমির নাম জারি নিয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনার একপর্যায়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী মাসুদুর রহমান সিদ্ধান্ত দেন নামজারিতে ছয় হাজার টাকা করে নেওয়ার। সম্প্রতি ঘুষ নির্ধারণের কথোপকথনের অডিও ফাঁস হলে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

এর জের ধরে মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি চার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে বদলি করা হলো। নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাশ বলেন, অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।