গাইবান্ধায় ১৩০ টাকায় মিলছে ১০ রকমের ভর্তা, গরুর মাংসসহ পেট ভরে দুপুরের খাবার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এই টাকায় এতগুলো পদ খেতে অনেকেই ভিড় করছেন হোটেলটিতে। হোটেলের নাম দেওয়া হয়েছে মেহেরাজ হোটেল। এর অবস্থান গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের নশরৎপুর গ্রামে। স্থানীয়ভাবে কেউ বলেন পেট চুক্তির হোটেল, কেউ বলেন ভর্তা-ভাতের হোটেল।
নশরৎপুর গ্রামের অসচ্ছল আমান মিয়া (৬০) প্রায় পাঁচ বছর আগে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতে ১০ রকমের ভর্তা, গরুর মাংসসহ পেট ভরে খেতে নেওয়া হতো ১০০ টাকা। বর্তমানে ১৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই টাকায় যে কেউ পেট ভরে চিকন চালের ভাত, তরকারি হিসেবে চার টুকরা গরুর মাংস এবং ১০ রকমের ভর্তা (বাদাম, তিল, তিসি, কালিজিরা, আলু, মাছ, শুঁটকি, রসুন, কাঁচা কলা ও বেগুন) খেতে পারেন।
গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে দক্ষিণে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এই হোটেল। হোটেলের মালিক আমান মিয়া বলেন, এখানে প্রতিদিন প্রায় এক মণ গরুর মাংস ও দেড় মণ চালের ভাত রান্না করা হয়। হোটেলে বেতনভুক্ত কোনো কর্মচারী নেই। তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের সাত সদস্য মিলে হোটেল পরিচালনা করেন। নারীরা রান্নার কাজ করেন। আর পরিবেশন করেন পুরুষেরা। ভাত খেয়ে পান খাওয়ার জন্য দূরে যেতে হয় না। পাশেই পান, চকলেট ও বিস্কুট বিক্রি করেন তিনি।
সম্প্রতি হোটেলে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুরের খাবার খেতে আসা লোকজনের উপচে পড়া ভিড়। হোটেলের ভেতরে টেবিল-চেয়ার ও বেঞ্চে বসে সবাই খাচ্ছেন। আছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসে করে খেতে আসছেন। হোটেলের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিচ্ছেন।
হোটেলে খেতে আসা পলাশবাড়ী উপজেলার তালুকজামিরা গ্রামের কলেজছাত্র ইমরান মাসুদ বলেন, ‘প্রায়ই নানা কাজে জেলা শহরে যেতে হয়। শহরে এলেই এই হোটেলে খেতে আসি। এখানে ঘরোয়া পরিবেশে রান্না ও রুচিসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়। কম টাকায় ১০ রকমের ভর্তা ও গরুর মাংস দিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে খুব ভালো লাগে। এই হোটেলে যে খাবার পরিবেশন করে ১৩০ টাকা নেওয়া হয়, শহরের অন্য কোনো হোটেলে এর দাম অনেক বেশি।’
গাইবান্ধা সদর উপজেলার টেংগোরজানি গ্রামের ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, ‘শহরে অনেক হোটেল থাকলেও এখানে রিকশা ভাড়া করে আসি। এখানে খাবারের মান ভালো। হোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পরিবেশনের ব্যবস্থা ভালো। খেতে বসে কোনো কিছু চাইতে হয় না। মনে হয়, আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেতে এসেছি।’
বোয়ালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলাব্যাপী হোটেলটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। এ উদ্যোগের কারণে আমান মিয়া নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, সাধারণ মানুষও ভালো মানের খাবার পাচ্ছেন।
আমান মিয়া বলেন, মান ভালো নয় বলে অনেকে হোটেলে খেতে আগ্রহী হন না। তাই শুধু ব্যবসার জন্য নয়, ভালো মানের খাবার পরিবেশনের জন্য হোটেলটি গড়ে তোলা হয়। এখানে বাসি খাবার বিক্রি করা হয় না। প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী রান্না করা হয়। বিক্রির পর অবশিষ্ট থাকলে সেসব খাবার তাঁরা নিজেরা খেয়ে নেন। কাউকে বেতন দিতে হয় না বলে অল্প দামে ভালো মানের খাবার দিতে পারেন বলে তিনি জানালেন।