সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন। মঙ্গলবার সকালে প্রার্থীর নিজ বাসভবনে
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন। মঙ্গলবার সকালে প্রার্থীর নিজ বাসভবনে

সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নানা অভিযোগ, জীবন নিয়ে শঙ্কা

শরীয়তপুর-১ (সদর-জাজিরা) আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় বাধা, কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন ওরফে দিপু মিয়া।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন তিনি। বিল্লাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) করেছেন।

বিল্লাল হোসেন সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এবং সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের চাচাতো ভাই। বিল্লাল হোসেন (আনারস প্রতীক) ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামারুজ্জামান উজ্জলসহ (ঘোড়া প্রতীক) মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিল্লালের স্ত্রী পেনসি বেগমও প্রার্থী হয়েছেন। আজ সংবাদ সম্মেলনের সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামানকে সমর্থন করছেন সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন। ২ মে প্রতীক বরাদ্দের পর সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা কামরুজ্জামানের ঘোড়া প্রতীকের প্রচারণা শুরু করেন। অন্যদিকে বিল্লাল হোসেন ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরাও আনারস প্রতীকের প্রচারণা শুরু করেন। গত চার দিনে চারটি জায়গায় প্রচার মাইক ভাঙচুর ও দুই কর্মীকে মারধরের অভিযোগ করেছেন বিল্লাল হোসেন। ওই সব ঘটনায় সদরের পালং মডেল থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সংসদ সদস্য, তাঁর স্ত্রী-সন্তান ও কর্মী-সমর্থকেরা ঘোড়া প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছেন। সংসদ সদস্য বাসা ও কার্যালয় থেকে তাঁর কর্মীদের ডেকে এনে হুমকি দিচ্ছেন এবং মারধর করছেন। সংসদ সদস্যের সন্ত্রাসী বাহিনী তাঁর (বিল্লাল) প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করছেন। মাইক, ক্লাব ভাঙচুর করছেন। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন। কোনো কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে দেবেন না বলেও হুমকি দিচ্ছেন। এসব ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনের পর জীবন শঙ্কায় পড়তে পারে উল্লেখ করে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার কিছু হলে বা মৃত্যু হলে, এ জন্য সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন, তাঁর পরিবার ও চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান দায়ী থাকবেন।’ সংবাদ সম্মেলন নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করেন বিল্লাল। এ নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংসদ সদস্যের মিডিয়া সমন্বয়কারী রিয়াদ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদ সদস্যের স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এ জন্য বিল্লাল হোসেনকে প্রার্থী হতে নিষেধ করেছিলেন সংসদ সদস্য। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। এখন ক্ষুব্ধ হয়ে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে বিষোদ্‌গার করছেন। সংসদ সদস্য ঢাকায় আছেন। নির্বাচনে কোনো প্রভাব বিস্তার করছেন না। কাউকে হুমকিও দেননি।

চন্দ্রপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন করেছি। এ জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে বিল্লাল হোসেন আমাকে হেয় করতে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।’

বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য আমাকে, আমার পরিবার ও কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন। প্রচারণা চালাতে দিচ্ছেন না। তাঁর মারমুখী আচরণে আমি শঙ্কিত। তাঁর প্রভাবে প্রশাসনও আমাকে সহায়তা করছেন না। আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চাই।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর দুই সমর্থক দুটি জিডি করেছেন। পুলিশ তদন্ত করছে। ওই প্রার্থী নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন, এমন কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাইফুদ্দিন গিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন আতঙ্কে আছেন, জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকার কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রচারণায় প্রভাব বিস্তারের একটি অভিযোগ করেছেন, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।